শনিবার দিল্লির তিস হাজারি আদালত অভিনেতা আশিষ কাপুরকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। তাঁকে লিঙ্ক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফার্স্ট ক্লাস পায়ল সিঙ্ঘালের আদালতে পেশ করা হয়। আশীষকে ২ সেপ্টেম্বর পুনেতে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে গণধর্ষণ মামলায় তাঁর নাম জড়ায়।

১১ আগস্ট আশিষের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মারধর-সহ বিভিন্ন ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়। অভিযোগপত্রে ওই মহিলা জানান, আশিষের এলাকায় আয়োজিত এক পার্টিতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে তাঁর পানীয়তে নাকি নেশাজাতীয় কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন এবং সেই অবস্থায় তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়ে ওয়াশরুমে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথমে মহিলা একাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিলেন, কিন্তু পরে তিনি তাঁর বয়ান বদলে কেবল আশিষের বিরুদ্ধেই ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। আশিষকে গ্রেপ্তার করার পর দিল্লি পুলিশ আদালতে পাঁচ দিনের হেফাজতের আবেদন জানায়, যাতে তাঁর মোবাইল ফোন উদ্ধার করা যায় এবং অভিযুক্তের পোটেন্সি টেস্ট করানো সম্ভব হয়। একইসঙ্গে, মামলায় অভিযুক্ত অন্যান্যদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা এবং তাঁদের পুনেতে নিয়ে যাওয়ারও অনুমতি চাওয়া হয়েছিল।

৩ সেপ্টেম্বর তিস হাজারি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফার্স্ট ক্লাস আশিষকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন, যাতে তদন্ত সহজ হয়। তাঁকে ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে তোলার কথা ছিল, তবে পুলিশ একদিন আগেই তাঁকে আদালতে হাজির করে। আদালত আশীষের পোটেন্সি টেস্ট করারও অনুমতি দিয়েছিল।

শুনানির সময় আশিষের পক্ষে আইনজীবী দীপক শর্মা, রাজন ওবেরয় এবং সোমেশ ওবেরয় হাজির ছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য আশিষকে হেফাজতে রাখার প্রয়োজন নেই, কারণ স্ট্যাটাস রিপোর্ট অনুযায়ী সেটি সহ-অভিযুক্ত কপিল গুপ্ত এবং তাঁর ঋতু গুপ্তর দখলে রয়েছে। আইনজীবী দীপক শর্মা যুক্তি দেন যে অভিযুক্ত কপিল গুপ্ত ইতিমধ্যেই অগ্রিম জামিন পেয়েছেন, তাই আশিষের হেফাজতের কোনও প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, কপিল গুপ্ত একজন পাইলট এবং ঋতু গুপ্ত একজন ব্যবসায়ী।

মহিলার আরও অভিযোগ করেন যে, এই ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে তদন্তকারীরা এখনো পর্যন্ত কোনও ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেননি। পুলিশ জানিয়েছে, আশিষের সঙ্গে অভিযোগকারীর প্রথম পরিচয় হয়েছিল ইনস্টাগ্রামে। পরে তিনি তাঁকে সেই হাউস পার্টিতে আমন্ত্রণ জানান, যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে।

১১ আগস্ট আশিষ তাঁর এক বন্ধু, বন্ধুর স্ত্রী এবং দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। ১৮ আগস্ট অভিযোগকারী তাঁর বয়ান সংশোধন করে জানান, আশিষ এবং তাঁর বন্ধু মিলে তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন, আর ওই মহিলা তাঁকে আক্রমণ করেছিলেন।

২১ আগস্ট আশিষের বন্ধু এনং তাঁর স্ত্রী অগ্রিম জামিনের জন্য আবেদন করেন এবং আদালত তা মঞ্জুর করে। পুলিশ জানিয়েছে, শুনানির সময় অভিযোগকারিণী উপস্থিত থাকলেও তিনি নিজের বয়ানে বন্ধুর নাম উল্লেখ করেননি।

তদন্তকারীরা জানান, সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে দেখা গিয়েছে, পার্টির সময় আশিষ এবং ওই মহিলা একসাথে বাথরুমে প্রবেশ করেছিলেন এবং কিছুক্ষণ বার হননি। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে অন্যান্য অতিথি এবং আয়োজক দরজায় নক করতে শুরু করেন।
 জানা যায়, দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়, যা সোসাইটির গেট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পুলিশ আরও জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত ওই বন্ধুর স্ত্রীই পিসিআর কলে ফোন করে ঘটনাটি জানান।