আজকাল ওয়েবডেস্ক: দর্শনার্থীরা প্রাচীন গ্রিসের ভাস্কর্য দেখলে চমকে যান এক অদ্ভুত কারণে—চমৎকার সুঠাম দেহ, পেশিবহুল বুক ও কাঁধ, কিন্তু অদ্ভুতভাবে ছোট যৌনাঙ্গ! এমনকি অ্যাথেন্সের জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে রাখা বিখ্যাত ‘পসেইডন (বা জিউস)’ ভাস্কর্যেও এই বৈপরীত্য চোখে পড়ে। গ্রিক সভ্যতায় যেখানে সৌন্দর্য, শক্তি আর দেবত্বের প্রতীক ছিল এসব দেবতা ও বীরেরা, সেখানে কেন এমন ‘নামমাত্র’ যৌনাঙ্গ? ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাচীন গ্রিক সংস্কৃতিতে বড় ও উত্তেজিত যৌনাঙ্গকে দেখা হতো অসভ্যতা, লালসা ও বুদ্ধিহীনতার প্রতীক হিসেবে। সে সময় ‘বুদ্ধিমান’, ‘সংযমী’ ও ‘নৈতিকতাসম্পন্ন’ পুরুষদের চিহ্ন হিসেবে ছোট যৌনাঙ্গকেই তুলে ধরা হতো শিল্পকর্মে। বিশেষ করে ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের আশেপাশে এই চিন্তাধারা ছিল তুঙ্গে।
‘কসমোপলিটন’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভাস্কররা সচেতনভাবেই দেবতা, দার্শনিক বা বীরদের ছোট যৌনাঙ্গে গড়ে তুলতেন—যাতে তাঁদের আত্মসংযম, যুক্তিবাদিতা ও বুদ্ধির প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়। সেই সময়ের শিল্পে, বড় যৌনাঙ্গ ছিল লালসায় মাতাল, বিকৃতপ্রবৃত্তির অধিকারী চরিত্রদের জন্যই বরাদ্দ। বিশেষ করে গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র প্রিয়াপোস—যিনি উর্বরতার দেবতা, তাঁকে দেখা যায় ‘বিপজ্জনকভাবে’ বড় যৌনাঙ্গের অধিকারী হিসেবে।
কিন্তু সময় বদলেছে। আজকের সমাজে পুরুষত্বের ধারণা সম্পূর্ণ উল্টো। বৃহৎ পুরুষাঙ্গ অনেক সময়েই ক্ষমতা, পুরুষত্ব ও যৌন দক্ষতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এমনকি ২০২৪ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় উঠে এসেছে—বিশ্বব্যাপী গড়ে পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য ৩০ বছরে ২৪% পর্যন্ত বেড়েছে। অর্থাৎ, যেখানে এককালে সংযম ছিল গর্বের বিষয়, এখন তা রীতিমতো অপমানজনক বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু প্রাচীন গ্রিস যেন একটাই বার্তা দিচ্ছে—"যে মাথা দিয়ে ভাবে, তার শরীরে বাড়তি কিছু লাগেনা!"
প্রাচীন গ্রিসে সৌন্দর্যবোধ ছিল শারীরিক ভারসাম্য, আত্মসংযম ও বুদ্ধিমত্তার মিশ্রণ। আধুনিক দৃষ্টিকোণে যেখানে বৃহৎ যৌনাঙ্গ অনেকসময় পুরুষত্বের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়, সেখানে প্রাচীন গ্রিসে ছিল একেবারে উল্টো দৃষ্টিভঙ্গি। তারা বিশ্বাস করত, সংযত কামনা ও যৌননিয়ন্ত্রণই একজন প্রকৃত জ্ঞানী, ভদ্র ও সমাজের নেতৃস্থানীয় পুরুষের গুণ। ফলে, দার্শনিক, রাজা বা দেবতাদের ভাস্কর্যে যৌনাঙ্গ ছোট করেই তুলে ধরা হতো—এ যেন একপ্রকার ‘নৈতিকতা’র শিল্পরূপ।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর 'চাহিদা' তুঙ্গে! 'অতৃপ্ত' বউকে সুখী করতে যা করলেন স্বামী, শুনলে ঘাম ছুটবে
অন্যদিকে, স্যাটার, সাইরেন, বা ব্যাকানালিয়ার মতো পৌরাণিক চরিত্র যারা অতিমাত্রায় ভোগবাদী, লালসায় পরিপূর্ণ, কিংবা পশুত্বপ্রবণ—তাদের দেহে বড় ও উগ্র যৌনাঙ্গ ফুটিয়ে তোলা হতো। এভাবে শিল্পকর্মে যৌন অঙ্গ শুধু দৈহিক নয়, নৈতিক অবস্থানেরও প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এমনকি প্রাচীন নাট্যকলায়ও এই পার্থক্য দেখা যায়—ক্লাসিকাল কমেডিতে যারা হাস্যকর বা অবজ্ঞার পাত্র, তাদের বড় যৌনাঙ্গের পুতুল পরে অভিনয় করতে দেখা যেত। এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে, শরীরের এক অংশ দিয়ে নয়, বরং মস্তিষ্ক ও শালীন আচরণই প্রাচীন গ্রিসে ছিল ‘আসল পুরুষত্ব’-এর মানদণ্ড।
