বলিউডের আকাশে তারারা যতই উজ্জ্বল হোক, মেঘ ঢাকে তাদের মনকেও। ঠিক তেমনই একদিন ‘অ্যানিম্যাল’-এর সেটে চুপচাপ এসে দাঁড়িয়েছিলেন রণবীর কাপুর। কারণ সদ্য মুক্তি পেয়েছে তাঁর ছবি ‘শামশেরা’— আর বক্স অফিসে ব্যাকারণ মেনে সেই ছবির ভরাডুবি হয়েছে। মুখে হাসি নেই, চোখে বিষণ্ণতা। পাশে ছিলেন অনিল কাপুর— যিনি তখনও নিজের চরিত্রের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, কিন্তু রণবীরের সেই ম্লান মুখ তাঁর নজর এড়িয়ে যায়নি।

অনিল স্মৃতি রোমন্থন করে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “রণবীর এসে বলেছিল— ‘সবাই আমাকে দেখছে, এত বড় ফ্লপ দিয়েছি!’ আমি তখন ওকে শুধু বলেছিলাম, ‘একটা ভাল শট দে, কাল সকালেই সব ভুলে যাবে।’”

এই ছোট্ট কথাটাই যেন হয়ে উঠেছিল জীবনদর্শন। অনিল কাপুরের মতে, সাফল্য-ব্যর্থতা কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তিনি বলেন,“আমরা একটা ফটোশুট করছিলাম। ওকে বলেছিলাম, ‘মন খারাপ করিস না, মানুষ তোর ব্যর্থতা নিয়ে ভাবছে না, তুই নিজেই ভাবছিস। নিজের কাজে মন দে। একবার সেটা করতে পারলে দেখবি সবকিছু মুছে গিয়েছে।”

অনিল আরও যোগ করেন, “চল্লিশ বছরের বেশি সময় লেগেছে আমার এটা বুঝতে— মানুষ কী বলল, কী লিখল, এগুলো একটা ‘আওয়াজ’ ছাড়া কিছু না। আজ যারা তরুণ, ওদেরও একই কথা বলি— ‘কাল পর্যন্ত সব ভুলে যাবে মানুষ।’”


বলিউডে এমন ঝড় বহুদিন দেখা যায়নি, যা দেখিয়েছিল ‘অ্যানিম্যাল’। পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার ‘অ্যানিম্যাল’ যেন নামের মতোই— বক্স অফিসে একদম পশুর মতো দাপিয়ে বেড়িয়েছে! রণবীর কাপুরের কাঁধে ভর করে মুক্তির পর থেকেই ছবিটি ভেঙেছে একের পর এক রেকর্ড, আর গোটা ইন্ডাস্ট্রি তাকিয়ে থেকেছে সেই বিস্ফোরণময় সাফল্যের দিকে। রণবীরের সঙ্গে এই ছবিতে দেখা গিয়েছে অনিল কাপুরকে এক দৃঢ় অথচ জটিল পিতার চরিত্রে। তাঁদের রসায়নই ছবির মূল মেরুদণ্ড— এক অস্থির, আবেগপ্রবণ সম্পর্ক, যা শেষ পর্যন্ত দর্শকদের নাড়িয়ে দিয়েছে ভিতর থেকে। রণবীরের বিপরীতে ছিলেন রাশ্মিকা মন্দানা, যিনি তাঁর সহজ অথচ গভীর অভিনয়ে মন কেড়েছেন দর্শকদের।

এই ছবির সুবাদে  রণবীরের জন্য শুরু হয় নতুন অধ্যায়। রণবীর যেন নিজেকে পুনরাবিষ্কার করলেন এই ছবির মাধ্যমে। তাঁর অভিনয়ে ছিল রাগ, ভালবাসা, ক্ষোভ— সবকিছুর বিস্ফোরণ। অনিল কাপুরও ছিলেন এক কঠিন অথচ গভীর পিতার চরিত্রে। ববি দেওলের নীরব তেজ, রাশ্মিকা মন্দানার কোমলতা,তৃপ্তি দিমরির রহস্যময় উপস্থিতি— সব মিলিয়ে ‘অ্যানিম্যাল’ হয়ে উঠেছিল এক আবেগের আগ্নেয়গিরি।

আর ফল? বক্স অফিসে বিস্ফোরণ! মুক্তির পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ছবিটি গড়েছিল রেকর্ড— কোটি টাকার অঙ্ক ছাপিয়ে গেছে সহজেই।

সমালোচকরা লিখেছিলেন, “এই ছবিটা রণবীর কাপুরের ফিনিক্স মুহূর্ত— যেখানে ব্যর্থতার ছাই থেকে জন্ম নেয় এক নতুন আগুন।”
আর হয়তো সেটাই সত্যি, কারণ অনিল কাপুরের সেই একবাক্য— “কাল সকালেই সব ভুলে যাবে”— আজ বলিউডের এক জীবন্ত শিক্ষা হয়ে রইল।