আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজস্থানের উদয়পুর জেলার মহাত্মা গান্ধী সরকারি হাসপাতালে ‘শিশু বদল’-এর গুরুতর অভিযোগে তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ২১ অক্টোবর দুই নবজাতকের জন্মের পর পরই এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। দুই সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে একজন পুত্র ও অপরজন কন্যা। দুই শিশুকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের বিবাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
বৃহস্পতিবার দুই পরিবারের বাবা-মায়ের ডিএনএ নমুনা জয়পুরের ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট মেলার কথা। ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও পরিবারের ক্ষোভ কমেনি।
বিতর্কের সূত্রপাত ২১ অক্টোবর দুপুরে। উদয়পুরের অনিতা রাওয়াত এবং চিতোরগড়ের রামেশ্বরী সোনি ৪৩ মিনিটের ব্যবধানে একই অপারেশন থিয়েটারে সন্তান প্রসব করেন। জানা গিয়েছে, অনিতা এক সুস্থ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন এবং রামেশ্বরীর একটি কন্যাসন্তান হয়।
কিন্তু হাসপাতাল কর্মীদের গাফিলতিতেই বিভ্রান্তি ছড়ায় বলে অভিযোগ। অনিতার স্বামী সুনীল রাওয়াত বলেন, “প্রথমে আমাদের এক ঘণ্টার জন্য একটি ছেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে কর্মীরা জানান, এটা ভুল করে হয়েছে এবং আমাদের হাতে একটি মেয়ে তুলে দেন। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম, কিন্তু তাঁরা শোনেননি।”
সুনীল তৎক্ষণাৎ হাথি পোল পুলিশ স্টেশনে নালিশ জানান। এরপর পুলিশ বুধবার দুই নবজাতককেই হাসপাতালের আইসিইউ-তে রাখে এবং মিল্ক ব্যাঙ্ক থেকে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে।
আবেগপ্রবণ সুনীল বলেন, “আমরা চাইনি বাচ্চারা মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হোক, তাই আমরা মেয়েটিকে গ্রহণ করেছি। ডিএনএ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত হাসপাতালেই থাকব। কিন্তু রিপোর্টে যদি প্রমাণ হয় ছেলেটিই আমাদের, তবে সেটা আমাদের জন্য খুব যন্ত্রণাদায়ক হবে- কারণ আমরা ইতিমধ্যেই মেয়েটিকে স্তন্যপান করিয়েছি এবং ওর প্রতি মায়া জন্মে গিয়েছে।”
উল্টোদিকে, রামেশ্বরী সোনির পরিবারও একই রকম দাবি করছে। তাঁদের অভিযোগ, কন্যাসন্তান ‘অবাঞ্ছিত’ হওয়ায় হাসপাতাল ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের বদল করে দিয়েছে।
পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। হাথি পোল থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা দুই পরিবারের বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। যদি শিশু বদলের বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তবে হাসপাতাল কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত দুই শিশুই সুরক্ষিত রয়েছে।” হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডক্টর আরএল সুমন বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করেন যে, পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর প্রত্যেক নবজাতক ও তাদের মায়ের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। অভিভাবকেরাও পরে তাতে সম্মত হয়েছেন। যদিও পরিবারের লোকজন এই বিবৃতি খারিজ করে দেন।
ডক্টর সুমন স্বীকার করেছেন যে, হাসপাতালের তরফে গোটা বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিবারগুলি এখন ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায়।
