আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভোজন রসিক বাঙালির প্রিয় খাদ্য তালিকায় বরাবরই রয়েছে গঙ্গা এবং পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা এবং পদ্মা নদীতে তেমনভাবে বড় ইলিশ মাছের দেখা পাওয়া না গেলেও এবছর ভাইফোঁটার ঠিক আগে থেকে ফরাক্কা এবং সামশেরগঞ্জের বিভিন্ন ঘাটে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বেশ বড় আকারের ইলিশ মাছ।
ভাইফোঁটার আগে থেকেই বড় ইলিশ মাছ বাজারে আসতে শুরু করায় আজ বোনেদের মুখে চওড়া হাসি। বহুদিন বাদে সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ হতে চলেছে। আজ অনেক দিদি এবং বোনই তাঁদের নিকটজনের পাতে তুলে দিচ্ছেন পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ।
ফরাক্কার বেশ কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন, গঙ্গা নদী থেকে যে সমস্ত জেলেরা ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে আসছেন তাদের কাছ থেকে দরদাম করে সরাসরি মাছ কিনলে ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: জোট ভোট জিতলে মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীই! কোন অঙ্কে আপত্তি ভুলে কংগ্রেসকে বলতে হল, 'আমাদের নেতা...'
ফিসারি এক্সটেনশন অফিসার (ফরাক্কা) সুনিত পাল বলেন, 'আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালি, হুগলির বলাগড় এবং মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থেকে ফরাক্কা ব্যারেজের মধ্যবর্তী অংশেই ইলিশ মাছের সব থেকে বেশি প্রজনন হয়। ফরাক্কা ব্যারেজ তৈরি হওয়ার আগে উজানে ইলিশ মাছ আরও বেশ কিছুটা যেত এবং সেখানেও প্রজনন হত। তবে ব্যারেজ তৈরি হওয়ার পর ওই এলাকা থেকে ৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ইলিশ মাছের সব থেকে বেশি প্রজনন হয়। ওই এলাকার মধ্যে সিআইএসএফ কোনও মৎস্যজীবীকে মাছ ধরতে দেয় না।'
তিনি বলেন, 'সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে অক্টোবর মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যের নদীতে ইলিশ মাছ ধরার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। এই সময় ইলিশ মাছ মোহনার দিক থেকে মিষ্টি জলে ডিম পাড়ার জন্য আসে। এবছর রাজ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় এবং নদীতে জলের গভীরতা খুব বেশি থাকায় একপ্রকার বাধাহীন ভাবেই ইলিশ মাছ মোহনা থেকে উজানের দিকে উঠে এসেছে। ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ পূর্ণবয়স্ক ইলিশ মাছের ডিম পাড়াও হয়ে গিয়েছে।'
আধিকারিক আরও বলেন, 'নমামী গঙ্গে প্রকল্পের কারণে গঙ্গা নদীর দূষণ আগের থেকে অনেকটা কমে যাওয়ার কারণে মোহনা থেকে প্রচুর ইলিশ মাছ মুর্শিদাবাদ জেলার দিকে আসছে। তার ফলে জেলেদের জালেও প্রচুর পরিমাণে রূপলি শস্য ধরা পড়েছে। আমাদের অনুমান এই কারণেই এবছর বাজারে ইলিশ মাছের দাম বেশ কিছুটা কমেছে।'
মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকেরা বলেন, সমস্ত জেলেদেরকে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে ২৩ সেন্টিমিটারের কম আকারের ইলিশ মাছ ধরা যাবে না। 'জুভেনাইল ইলিশ' বা খোকা ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়লে তাকে ফের জলে ছেড়ে দিতে হবে। এর পাশাপাশি ইলিশ মাছ বড় হওয়ার সময় মোহনামুখী হলে সেগুলো যাতে না ধরা হয় সেই আবেদনও জেলেদের কাছে রাখা হয়েছে মৎস্য দপ্তরের তরফ থেকে।
তবে মৎস দপ্তরের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গা এবং ভাগীরথীর জলে 'আবাসিক ইলিশ' মাছের সংখ্যা যথেষ্টই বাড়ছে। এই কারণে প্রায় সারা বছরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গঙ্গা এবং ভাগীরথীর জলে বড় আকারের ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে বলে এক শ্রেনীর মৎস্য বিশারদদের মত। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার বাসিন্দা রানু মণ্ডল বলেন,'এক মাস আগেও বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২০০০ -২২০০ টাকার কাছাকাছি ছিল। কিন্তু ভাইফোঁটার কয়েকদিন আগে থেকেই ইলিশের দাম যথেষ্ট কমে গিয়েছে। ভাইফোঁটা উপলক্ষে আজই আমি বাজার থেকে একটি ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ হাজার টাকায় কিনে এনেছি।'
সূত্রের খবর, প্রশাসনের তরফ থেকে খোকা ইলিশ না ধরার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা হলেও তা সম্পূর্ণ সফল হয়নি। এখনও প্রায় রোজই সামশেরগঞ্জে এবং ফরাক্কার বিভিন্ন বাজারে ১০০ -২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও যথেষ্ট সংখ্যায় পাওয়া যাচ্ছে। বিপুল হালদার নামে এক মৎস্যজিবী বলেন, 'ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম, ঘাটপাড়া ,বিন্দুগ্রাম ,জাফরগঞ্জ, সাঁকোপাড়া সহ সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান ঘাট এবং নিমতিতা এলাকায় গঙ্গা নদী থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। জেলেদের জালে যে ইলিশগুলো উঠছে তার বেশিরভাগই ওজন ৫০০ গ্রামের বেশি থাকছে।' ফরাক্কার এক মাছের আড়ৎদার জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে রোজই প্রায় ৩-৪ কুইন্টাল গঙ্গার ইলিশের যোগান থাকছে। তার ফলে এবছর ভাইফোঁটার দিন বাজারে ইলিশের দাম যথেষ্টই কমে গিয়েছে।
