বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ধুঁকছে গোটা বিশ্ব। যার সমাধানে টেস্ট টিউব বেবি’ থেকে শুরু করে ‘ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) নানা ব্যবস্থার শরণাপন্ন হচ্ছেন অগুনতি দম্পতি। তবে এবার আর সন্তান জন্মের জন্য মানুষেরই প্রয়োজন হবে না। শিশুর জন্ম দিতে পারবে যন্ত্রমানব তথা রোবট। শুধু সন্তান প্রসবই নয়, সন্তানধারণ থেকে গর্ভাবস্থা, মাতৃত্বের প্রত্যেকটি ধাপই পেরোবে ওই 'প্রেগন্যান্সি রোবট'। ২০২৬ সালের মধ্যে এই অবিশ্বাস্য প্রযুক্তির সাহায্য সন্তান সুখ পাবে মানবজাতি, এমনই আশা গবেষকদের।
মাতৃত্বের সংজ্ঞা পাল্টে দিতে চলেছে চীন। দেশটির গবেষকেরা এমন এক মানবসদৃশ রোবট তৈরি করছেন, যা কৃত্রিম গর্ভের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারবে। আগামী বছরের মধ্যেই প্রথম প্রোটোটাইপ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। গুয়াংজুর কাইওয়া টেকনোলজি-র গবেষক ডঃ ঝাং কিউফেং গবেষণাটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিশ্ব রোবট সম্মেলন ২০২৫-এ প্রযুক্তিটি প্রথমবারের মতো সামনে আনা হয়। বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রতিটি শিশু জন্মের খরচ পড়বে প্রায় ১ লাখ ইউয়ান অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১২ লাখ টাকা।
ঠিক কীভাবে রোবট সন্তানধারণ করবে? গবেষকরা জানিয়েছেন, রোবটটি স্বাভাবিকভাবে গর্ভবতী হবে না। এতে থাকবে এক ধরনের কৃত্রিম গর্ভ, যেখানে অ্যামনিওটিক তরলের ভেতর ভ্রূণ বেড়ে উঠবে। একটি বিশেষ নলের মাধ্যমে ভ্রূণকে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করা হবে। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তানের জন্ম পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া রোবটের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে।
প্রসঙ্গত, চীনে বন্ধ্যাত্বের হার দ্রুত বাড়ছে। ২০০৭ সালে যেখানে তা ছিল প্রায় ১২ শতাংশ, ২০২০ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশে। ফলে নতুন এই প্রযুক্তি দেশটির জন্য একদিকে যেমন আশার আলো দেখিয়েছে। তবে শুধু চীন নয়, আধুনিক জীবনের জাঁতাকলে গোটা বিশ্বেই এখন বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা উর্ধ্বমুখী। যার জন্য অনেক চিকিৎসা করেও সুফল পাচ্ছেন না অনেক দম্পতি। আর এই প্রযুক্তি সন্তান ধারণে অক্ষম দম্পতি এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় থাকা মহিলাদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে আশা গবেষকদের। একইসঙ্গে প্রিম্যাচিওর শিশুদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুনঃ সিগারেট থেকে শত হস্ত দূরে, তাও ফুসফুসে ক্যানসার! কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন বিপদসংকেত?
যদিও অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি নিয়ে কম বিতর্ক কম নেই। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, "রোবট সন্তানধারণ করলে মাতৃত্বের ভূমিকা কোথায় দাঁড়াবে?”। আবার কেউ মনে করছেন, “রোবটের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুর আইনি অধিকার কী হবে?”, এমনকি অবৈধ বাজারে শুক্রাণু, ডিম্বাণু ও কৃত্রিম গর্ভের অপব্যবহার হতে পারে কিনা এ নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
