মোহনবাগান - ২ (দিমিত্রি, অঙ্কন-আত্মঘাতী )

ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব -

সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: শিল্ড ফাইনালে ডার্বি। গোলে ফিরলেন 'বিতর্কিত' দিমি। বুধবার ইউনাইটেড স্পোর্টসকে ২-০ গোলে হারিয়ে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে চলে গেল মোহনবাগান। সমর্থকদের বিদ্রোহের দিনে বহু আকাঙ্খিত গোল পেলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস।‌ মোহনবাগানের অধিনায়কের ভূমিকায় নেমেই গোল। তবে মন পাননি সমর্থকদের। গোলের পরও গ্যালারিতে পড়ল পোস্টার। 'শেম ম্যানেজমেন্ট', 'গো আউট দিমি'। তাই দীর্ঘদিন পর সবুজ মেরুন জার্সিতে গোল পেলেও কোনও সেলিব্রেশন নেই। মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোল আত্মঘাতী। তবে জিতলেও খেলার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। কোনও দলই আহামরি ফুটবল খেলতে পারেনি। দুটো গোল ছাড়া সেই অর্থে ম্যাচে কিছুই নেই। তারমধ্যে প্রথমার্ধের তুলনায় ভাল ফুটবল ইউনাইটেডের। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা চেষ্টা করে বাগান। 

জিতলেই ডার্বি। এমন পরিস্থিতিতে খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান। ঝকঝকে আবহাওয়া। রোদ ঝলমলে দিন। কিন্তু হোসে মোলিনার দলের প্রথমার্ধের খেলা ততটা ঝকঝকে নয়। গোলটি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনও মুভ নেই। বরং, অনেক বেশি তৎপর ছিলেন ইউনাইটেডের ফুটবলাররা। লালকমল ভৌমিকের দলের সুযোগও বেশি। ম্যাচের প্রথমার্ধের পাওনা দিমিত্রি পেত্রাতোসের গোল। বুধবার দুপুরে শুরুতে মাঠের ভেতরে কোনও পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢুকতে দেয়নি। তবে মাঠের বাইরে এদিনও পোস্টার পড়ে। 'কাওয়ার্ড গোয়েঙ্কা, কাওয়ার্ড বিনয়, কাওয়ার্ড দিমি'। তাঁর নামে পোস্টার পড়ার দিনই গোল পেলেন পেত্রাতোস। জোড়া গোল পেতে পারতেন। কিন্তু তাঁর ফ্রিকিক বাঁচান ইউনাইটেডের কিপার। 

এদিন দলে একাধিক পরিবর্তন করেন মোলিনা। পাঁচজন জাতীয় দলে। মনবীরের চোট। ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে দলে সাতটি পরিবর্তন করেন বাগান কোচ। কিন্তু ম্যাড়ম্যাড়ে ফুটবল। ফরমেশন সেই ৪-২-৩-১। লেফট উইংয়ে খেলান রবসনকে। দীর্ঘদিন পর প্রথম একাদশে ফেরেন দিমিত্রি। তার একটু পেছন থেকে খেলেন কামিন্স। কিন্তু এদিন প্রথমার্ধে ফিকে রবসন। মাঝমাঠ নেই বললেই চলে। বলই পাননি ব্রাজিলীয়। সেই তুলনায় সুযোগ অনেক বেশি ইউনাইটেডের। প্রথম সুযোগও লালকমলের দলের। ম্যাচের ১৪ মিনিটে চিজোবার শট বাঁচায় বাগান কিপার জাহিদ ভুখারি। ম্যাচের ২১ মিনিটে লালরেমরুয়াটার শট ক্লিয়ার করেন মেহতাব। বাগান ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে পোস্টের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ম্যাচের ২৪ মিনিটে গোল লক্ষ্য করে প্রথম শট মোহনবাগানের। কামিন্সের শট প্রতিপক্ষের পায়ে লেগে বেরিয়ে যায়। তার এক মিনিটের মধ্যে দিমিত্রির ঠিকানা লেখা পাস। ছুঁলেই গোল। কিন্তু বল পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি কিয়ান। 

কয়েকদিন আগে কলকাতা লিগের ম্যাচে ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় ইউনাইটেড। এদিনও যথেষ্ট ভাল খেলে। ম্যাচের ২৭ মিনিটে বাঁ দিক থেকে সুজল মুন্ডার দূরপাল্লার শট। পোস্টের ওপর দিয়ে ভেসে যায়। গোলের বেশ কয়েকটা সুযোগ তৈরি করে ইউনাইটেড। প্রথমার্ধে বাগানের হাতেগোনা দুটো সুযোগ। ম্যাচের ৪৫ মিনিটে দিমিত্রির গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। রবসনের পাস থেকে কামিন্সের মাইনাস। পায়ের জটলার মধ্যে থেকে গোল করেন দিমিত্রি। গোল করেও কোনও সেলিব্রেশন নেই অজি তারকার। উৎসবে মাতেনি দলও। তার এক মিনিট আগেও গোল পেতে পারত সবুজ মেরুন। দিমিত্রির ফ্রিকিক বাঁচায় ইউনাইটেডের গোলকিপার সুব্রত সাঁতরা। 

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান বাড়ায় মোহনবাগান। ম্যাচের ৪৯ মিনিটে ২-০। কামিন্সের শট বাঁচায় বিপক্ষের গোলকিপার সুব্রত। ইউনাইটেডের অঙ্কন ভট্টাচার্যের গায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। আত্মঘাতী গোল। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাকলারেন, সুহেলরা নামায় কিছুটা ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে সবুজ মেরুন ব্রিগেড। কিন্তু ম্যাড়ম্যাড়ে খেলা। শেষ ৪৫ মিনিটে সেইভাবে ওপেন সুযোগ পায়নি কলকাতার প্রধান। ম্যাকলারেনের গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে পজিশন বদলে মাঝমাঠে খেলেন রবসন। কিন্তু আগের দিন দুর্দান্ত খেললেও, বুধ বিকেলে ম্লান ব্রাজিলীয় তারকা। হাতেগোনা কয়েকটি টাচ মাত্র। শেষলগ্নে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পায় ইউনাইটেড। শ্রীনাথের শট বাঁচায় বাগান কিপার।