সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: শিল্ড জয়ে মোহনবাগানে আগাম দীপাবলি। মরশুমের প্রথম ট্রফি জেতার পর আলোকিত সবুজ মেরুন শিবির। চারিদিকে ক্যামেরার ঝলকানির মধ্যে মাঠেই স্ত্রীকে চুম্বন করলেন হোসে মোলিনা। যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। মরশুমের দুটো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হার। একটি ডার্বি, অন্যটি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের মাঠে। কিছুটা চাপে ছিলেন। গত বছর জোড়া ট্রফি জিতেছেন। ঘরে এসেছে লিগ শিল্ড এবং আইএসএল কাপ। কিন্তু সমর্থকদের স্মৃতি ক্ষণস্থায়ী। তারওপর বর্তমান পরিস্থিতির চাপ। সবকিছুতে ধামাচাপা দিতে শিল্ড জয় আবশ্যিক ছিল। হল ও তাই। যেন দেওয়াল লিখন ছিল। সমর্থকদের জন্য ট্রফি জিততে পেরে খুশি মোলিনা। জানালেন, শিল্ড শেষ হতে না হতেই ফ্যানদের সুপার কাপের ডার্বি জয়ের আবদার শুরু হয়ে গিয়েছে। মোলিনা বলেন, 'ফ্যানরা জয়ের আশায় ছিল। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভাল লাগছে। জেতার পর টানেল দিয়ে আসার সময় কয়েকজন সমর্থকের সঙ্গে দেখা হয়। ইতিমধ্যেই ওরা সুপার কাপের ডার্বি জয়ের আবদার করতে শুরু করেছে। বলছে, আমাদের ডার্বি জিততেই হবে।' 

শিল্ড জিতে খুশি। তবে বিতর্কের মধ্যেই এএফসি কাপের প্রসঙ্গ তুললেন বাগান কোচ। মোলিনা বলেন, 'আপাতত আইএসএল কবে শুরু হবে জানা নেই। তার আগে কিছু ম্যাচ খেলতে পেরে সন্তুষ্ট। তবে খুশি হতাম যদি জর্ডান গিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ খেলতে পারতাম। এই জয় অবশ্যই আমাদের সুপার কাপের প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে। তবে আমি এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিয়ে উত্তেজিত ছিলাম।' ম্যাচ টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ালেও কোনও দলই আদর্শ ফুটবল খেলতে পারেনি। ম্যাচটা যে পারফেক্ট ছিল না মেনে নিলেন বাগানের স্প্যানিশ কোচ। ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো মনে করেন, প্রথমার্ধেই খেলা শেষ করে দিতে পারত তাঁরা। বাগান কোচের অবশ্য তাতে সায় নেই। মোলিনা বলেন, 'ম্যাচটা পারফেক্ট ছিল না। কঠিন ম্যাচ ছিল। আমাদের জন্য মোটেই সহজ ছিল না। তবে আমরা সুযোগ তৈরি করেছি। আমি তাতেই খুশি। এটাই ফুটবল। ওরা এগিয়ে যায়। বিরতির আগে আমরা সমতা ফেরাই। তারপরও দুটো সুযোগ ছিল। জয়ের ক্ষেত্রে দল হিসেবে আমরা এদিন বেশি সাফল্য পেয়েছি।' 

ম্যাচের নায়ক বিশাল কাইত।‌ টাইব্রেকারে দলকে চ্যাম্পিয়ন করা যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন হিমাচলের গোলকিপার। এর আগেও তাঁর বিশ্বস্ত হাত মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। আরও একবার তার পুনরাবৃত্তি। তবে এই জয়কেই এগিয়ে রাখলেন। বিশাল বলেন, 'আমার গোল বাঁচানো কাজ। আমি সেটাই করেছি। আগের জয়ের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। সব টুর্নামেন্ট আলাদা। তবে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জেতা সহজ নয়। কঠিন প্রতিপক্ষ। তাই এই জয়কেই এগিয়ে রাখব।' এমন পরিস্থিতিতেও সমর্থকদের পাশে পেয়ে খুশি বিশাল। ক্লাবের পাশাপাশি তাঁদেরও জয় উৎসর্গ করলেন। বিশাল বলেন, 'প্রত্যেক টুর্নামেন্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ট্রফি জিততে চাই। সমর্থকরা আমাদের সাপোর্ট করেছে। কঠিন পরিস্থিতি ছিল। সাপোর্টারদের ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য।' টাইব্রেকারের সমার্থক শব্দ হয়ে গিয়েছে বিশাল কাইত। রহস্য কী? বিশাল বলেন, 'আমি জানি পেনাল্টি বাঁচানো আমার কাজ। আমাদের দলে ভাল পেনাল্টি শুটার রয়েছে। জানতাম একটা পেনাল্টি বাঁচালেই জেতা সম্ভব।' বাগান কিপার জানান, এই জয় সুপার কাপের ডার্বির আগে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। বিশালের পরবর্তী টার্গেট সুপার কাপ। আপাতত আইএসএল নেই, তাই গোয়ায় ফের নিজের সেরাটা দেওয়াই লক্ষ্য বাগান কিপারের।