আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতবর্ষের পশ্চিম অংশে অর্থাৎ আরব সাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দক্ষিন গুজরাটের উপকূলে আগামী ৩০ নভেম্বর দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই কারণেই আরব সাগর উপকূল বরাবর গুজরাট মহারাষ্ট্র এবং উত্তর কর্ণাটকে প্রবল দুর্যোগে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ আগামী পরশু অথবা তার পরের দিন পর্যন্ত এই বৃষ্টির দাপট চলতে পারে। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মান্থা শক্তি বাড়িয়ে অবস্থান করছে বঙ্গোপসাগরে। মনে করা হচ্ছে অন্ধ্র উপকূলে মছলিপত্তনম ও কলিঙ্গপত্তনম এবং কাকিনাড়া এলাকায় ২৮ এ অক্টোবর অতি শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় হয়ে আছড়ে পড়বে৷ এর ফলে ভারতের পূর্ব উপকূলেও ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আর সেই কারণেই আগামিকাল থেকে কয়েক পশলা এবং বুধবার থেকে টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে যা প্রায় সপ্তাহ শেষ পর্যন্ত চলবে। মনে করা হচ্ছে, গোটা দেশ জুড়েই তাপমাত্রা না কমার অন্যতম কারণ এই দুই ঘূর্ণিঝড়।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালেই দাপট শুরু হবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার। চরম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আগেভাগেই দুই রাজ্যে লাল সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। এই দুই রাজ্যে বাতিল করা হয়েছে একগুচ্ছ ট্রেন, সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ইস্ট কোস্ট রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, আজ ২৭ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৪৩টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রুটে একাধিক ট্রেন বাতিল হয়েছে। বিশাখাপত্তনম -কোরাপুট, বিশাখাপত্তনম- কিরণদুল, বিশাখাপত্তনম- তিরুপতি, বিশাখাপত্তনম -চেন্নাই রুটে ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার জেরে লাল সতর্কতা জারি রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। ২৬টি জেলার মধ্যে ২৩টিতে লাল, কমলা সতর্কতা জারি রয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু। পরিস্থিতি সামাল দিতে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আগামী ২৮ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার স্কুল বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী তিনদিন অন্ধ্রপ্রদেশের আনাকাপল্লিতে সমস্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। বিশাখাপত্তনম ও কাকিনাড়ার সমস্ত সমুদ্র সৈকত বন্ধ রাখা হয়েছে। পর্যটকদের এই পরিস্থিতিতে সমুদ্র সৈকতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ৪০০টি অস্থায়ী শিবির তৈরি রয়েছে। একাধিক দমকল বাহিনী, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে জেলায় জেলায়।
সোমবার ভোররাতেই অতি গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মান্থা দক্ষিণ পশ্চিম, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলেছে। গত ছ'ঘণ্টায় ১৫ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগে অগ্রসর হচ্ছে এটি। তামিলনাড়ু থেকে ৫৬০ কিমি পূর্ব - দক্ষিণ পূর্বে, অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া থেকে ৬২০ কিমি দক্ষিণ - দক্ষিণ পূর্বে, বিশাখাপত্তনম থেকে ৬৫০ কিমি দক্ষিণ - দক্ষিণ পূর্বে, ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৭৯০ কিমি দক্ষিণে, পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৮১০ কিমি পশ্চিমে রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালেই মধ্যে মান্থা অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। আগামী ১২ ঘণ্টায় এটি এগিয়ে যাবে উত্তর পশ্চিম দিকে। আগামিকাল সকালেই আরও শক্তি বাড়াবে এই ঘূর্ণিঝড়। মৌসম ভবন আরও জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল মছলিপত্তনাম - কলিঙ্গপত্তনাম (কাকিনাড়ার কাছে) দিয়ে বয়ে যাবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থা। সেই সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিমি হতে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১১০ কিমিও হতে পারে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া এবং মছলিপত্তনম উপকূলের মধ্যে কোনও একটি জায়গায় ল্যান্ডফল হবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মান্থার। এর জেরে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে সমুদ্র থেকে মৎস্যজীবীদের ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কর্নাটক, রাজস্থান, গুজরাট, কেরল, মাহে, ওড়িশা, রয়েলসীমা, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি ও করাইকালে। এছাড়া ছত্তিশগড়, কর্নাটক, কঙ্কন-গোয়া ও মধ্যপ্রদেশ সংলগ্ন এলাকাতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি সপ্তাহে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও।
