আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের প্রধান বিচারপতি (CJI) বি.আর. গাভাই শুক্রবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, অবসরের পর তিনি কোনও সরকারি পদ গ্রহণ করবেন না। মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলার দারাপুরে নিজের পৈতৃক গ্রামে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে বিচারপতি গাভাই বলেন, “আমি স্থির করে ফেলেছি অবসরের পর কোনও সরকারি পদে বসব না। তখন সময় থাকবে, চেষ্টা করব দারাপুর, অমরাবতী ও নাগপুরে আরও বেশি সময় কাটাতে।” চলতি বছরের নভেম্বর মাসে প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হবে। তাঁর এই ঘোষণাকে আইন ও বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে নিযুক্ত হচ্ছেন, যার ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
 
প্রধান বিচারপতি গাভাইয়ের বক্তব্যের পটভূমিতে রয়েছে এক গাঢ় রাজনৈতিক বাস্তবতা। বিগত কয়েক বছরে অবসরপ্রাপ্ত একাধিক বিচারপতিকে বিজেপি সরকারের অধীনে রাজ্যপাল, সংসদ সদস্য, বা তদন্ত কমিশনের প্রধান পদে নিযুক্ত হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ বিজেপির হয়ে রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, অবসরের কিছুদিনের মধ্যেই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাষ্ট্রপতির কোটা থেকে রাজ্যসভার সাংসদ করা হয়। এই সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে।
 তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে গাভাই বলেন, “আমি সাধারণ পরিবারের সন্তান। বাবার আদর্শ থেকেই শিখেছি – জনসেবা মানে ক্ষমতার লোভ নয়, নীতির পথে চলা।” এরপর তিনি তাঁর বাবা, প্রয়াত আর.এস. গাভাইয়ের স্মৃতিসৌধে মাল্যদান করেন। উল্লেখ্য, আর.এস. গাভাই ছিলেন কেরল ও বিহারের প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং একজন বিশিষ্ট দলিত রাজনীতিক।
 
এদিন প্রধান বিচারপতি দারাপুরে তাঁর পিতার নামে একটি বিশাল প্রবেশদ্বার নির্মাণের শিলান্যাসও করেন। উপস্থিত ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। বিচারপতি গাভাইয়ের এই অবস্থান আইনজীবী মহলে এবং নাগরিক সমাজে ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছে। দিল্লির সিনিয়র অ্যাডভোকেট মেনকা গুরস্বামী এক বিবৃতিতে বলেন, “বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে এই ধরনের স্পষ্ট অবস্থান অত্যন্ত জরুরি। বিচারক অবসরের পর রাজনৈতিক পুরস্কার পেলে, তাঁদের রায়ের নিরপেক্ষতা নিয়েই সাধারণ মানুষ সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করেন।” সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে গাভাই হচ্ছেন দ্বিতীয় দলিত ব্যক্তি। তাই তাঁর এমন নৈতিক দৃঢ়তার ঘোষণা অনেকের কাছেই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ।