আজকাল ওয়েবডেস্ক:  রবিবার (১৭ আগস্ট) ইয়েমেনের রাজধানী সানার দক্ষিণে হুথি-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হুথিদের ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার জবাবে এই অভিযানে জ্বালানি পরিকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা

ইজরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, নৌবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সানার দক্ষিণে হাজিজ বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ইয়েমেনে হুথি-নিয়ন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ শক্তি পরিকাঠামোগুলোর একটি। হুথি-নিয়ন্ত্রিত আল মাসিরাহ টেলিভিশন হামলাকে “আগ্রাসন” আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়েকটি জেনারেটর অচল হয়ে পড়ে এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও এলাকাজুড়ে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে জানিয়েছেন সানার বাসিন্দারা। হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ

একইদিন বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে হুথিরা ইজরায়েলের দিকে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। আইডিএফ জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিমানবাহিনী সফলভাবে আটকায়। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় তেল আভিভ, জেরুজালেমের পশ্চিম উপশহর ও মধ্য ইজরায়েলে সাইরেন বেজে ওঠে, ফলে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। হুথিরা দাবি করেছে, তারা বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। তবে হামলায় কোনো প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

 আরও পড়ুন: চ্যাটজিপিটির ভুল তথ্য ভরসা করে বিমানে চড়তে গেছিল দম্পতি, তারপর যা হল!

ইজরায়েলি প্রতিক্রিয়া

হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যারা ইজরায়েলের দিকে হাত তোলে, তাদের হাত কেটে ফেলা হবে। আজকের হামলা কেবল শুরু, সামনে আরও শক্তিশালী ও বেদনাদায়ক আঘাত আসছে।” তিনি আরও জানান, ইজরায়েল ইয়েমেনের ওপর “বিমান ও নৌ অবরোধ” জোরদার করেছে।

হামলার প্রেক্ষাপট

এটি ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১৪তম সামরিক অভিযান। এর মধ্যে বেশিরভাগ হামলাই পরিচালিত হয়েছে ইজরায়েলি বিমানবাহিনীর ফাইটার জেট দিয়ে। তবে এবারের হামলা নৌবাহিনী পরিচালিত দ্বিতীয় বড় ধরনের অভিযান। জুলাই মাসে ড্রোন হামলার মাধ্যমে শেষবার হুথিদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল আইডিএফ।

অক্টোবর ৭ তারিখে হামাসের ইজরায়েল আক্রমণের পর থেকেই হুথিরা ইজরায়েলের দিকে নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করছে। তারা নিজেদের এই হামলাকে “গাজার প্রতি সংহতি” হিসেবে উল্লেখ করে। জানুয়ারি ২০২৫-এ ইজরায়েল–হামাস যুদ্ধবিরতির সময় হুথিরা সাময়িকভাবে হামলা বন্ধ করলেও মার্চ মাসে গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে তারা আবারও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে। শুধু মার্চ থেকে এ পর্যন্ত হুথিরা ইজরায়েলের দিকে ৭০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং কমপক্ষে ২২টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। যদিও বেশিরভাগই আকাশেই প্রতিহত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মাত্রা

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও অতীতে হুথিদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের সঙ্গে একটি চুক্তি ঘোষণা করেছিল, যাতে বলা হয়েছিল— মার্কিন বোমা হামলা বন্ধের বিনিময়ে হুথিরা লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক জাহাজে আক্রমণ বন্ধ করবে। তবে হুথিরা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, এই চুক্তি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের হামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ইজরায়েল–হুথি সংঘাত এখন মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধক্ষেত্রকে আরও জটিল করে তুলছে। ইয়েমেন থেকে ইজরায়েল পর্যন্ত ১,৮০০ কিলোমিটার দূরত্ব সত্ত্বেও হুথিদের হামলা এবং তার জবাবে ইজরায়েলের পাল্টা অভিযান প্রমাণ করছে যে, গাজার যুদ্ধ এখন আঞ্চলিক রূপ নিচ্ছে।