দুর্গাপুজোর আগে স্লিমফিট হওয়ার ঝোঁক দেখা যায় বেশিরভাগ বাঙালির মধ্যে। কড়া ডায়েট থেকে জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শরীরচর্চা, সবেতেই  আগ্রহ থাকে তুঙ্গে! তারপর পুজোয় রোজই চলে জমিয়ে ভূরিভোজ। ব্যস, বাড়তি মেদ ফের উঁকি মারতে শুরু করে। কিন্তু এত কষ্ট করে যে ওজন কমালেন তার কোনও লাভই হল না? চিন্তা নেই।  উৎসবে রুটিন ভাঙাটাই যে স্বাভাবিক। তবে এবার সতর্ক হওয়ার পালা। অনিয়ম ছেড়ে ফিরতে হবে নিয়মে। তাছাড়া কয়েকদিন বাদে কালীপুজোতেও ফের হইহুল্লোড় হল বলে! তাই তার আগে শারীরিকভাবে যত দ্রুত সম্ভব চাঙ্গা হয়ে উঠুন। জীবনযাপনের রুটিনে খানিকটা পরিবর্তন আনলেই জাঁকিয়ে বসা কয়েক কেজি ওজন সহজেই কমাতে পারবেন। সেবিষয়ে পরামর্শ দিলেন  পুষ্টিবিদ অগ্নিমিত্রা মুখোপাধ্যায়।


নিয়মের গেরোয় বাঁধুন

 

*পুজো হোক কিংবা যে কোনও অনুষ্ঠান, মূলত আমাদের রোজকার রুটিন ভেঙে যায়। তাই এখন শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন কাটানো প্রয়োজন। খাদ্যাভ্যাসে আত্মনিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বাড়তি মেদ ঝরাতে ক্র্যাশ ডায়েট নয়, ব্যালেন্স করে খাওয়াদাওয়া করাই শ্রেয়। 

 

*খাবারের সময় ঠিক রাখুন। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট, দুপুর দেড়টার মধ্যে লাঞ্চ এবং রাত ৯-৯.৩০টার মধ্যে ডিনার করে নেওয়া উচিত। 


*ঘুমকে গুরুত্ব দিতে হবে। 'স্লিপ সাইকেল' ঠিক না থাকলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাতে একটানা ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমান। 


*মিষ্টি, চকোলেট, আইসক্রিমের মতো যে সব খাবার থেকে শুধুই ক্যালোরি আসে সেগুলো কয়েকদিন বন্ধ রাখুন।


*বাড়িতে অতিরিক্ত তেলে রান্না করলেও ওজন কমানো দুষ্কর। রান্নায় তেলের ব্যবহার নিয়ে সচেতন থাকুন। সঙ্গে রান্নার পদ্ধতি বদলান। ফ্রায়েড খাবারের বদলে গ্রিলড, বেকড, স্টিমড কিংবা তন্দুর খেতে পারেন।  


*সবুজ শাকসবজি বেশি খান, পাতে কম রাখুন কার্বোহাইড্রেট। খেতে বসে আগে স্যালাড, প্রোটিন খেয়ে তারপর কার্বোহাইড্রেট খান। এই নিয়ম মেনে চললে স্বাভাবিকভাবেই কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরিমাণ কমবে। 


*মনসংযোগ দিয়ে খাবার খান। অর্থাৎ টিভি দেখতে দেখতে, ল্যাপটপ কিংবা ফোনে কাজ করার সময়ে খেলে একদিকে যেমন খাওয়ার পরিমাণের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, তেমনই খাবার উপভোগ করতে পারবেন না। সঙ্গে সঠিকভাবে চিবিয়ে না খেলে বদহজমের আশঙ্কাও বাড়বে।  


*ডায়েটে বেশি ফল রাখুন। তবে ফলের রস নয়, যে কোনও ফল চিবিয়ে খান। হালকা খিদে পেলেও ফল খেতে পারেন। 


*পুজোয় শরীরচর্চায় যতই ফাঁকি পড়ুক, এবার কিন্তু পুরনো নিয়মে ফিরতে হবে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ মাস্ট।


*প্রতিটি খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে জল খান। সারা দিন গরম জল খেলেও উপকার পাবেন। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে গরম জল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। 

 

*বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কাউকে দেখে ডায়েট করতে যাবেন না। এতে ক্রেভিংয়ে ভুলভাল খাওয়ার প্রতি ঝোঁক বাড়তে পারে। সঙ্গে ফাঁদে পড়তে পারেন কোনও নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যার জটিলতাতেও।


*মন ভাল না থাকলেই অস্বাস্থ্যকর খাবারের ক্রেভিং হয়। তাই মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকুন। মন ভাল রাখার কাজ করুন। 

 
*খিদে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে নির্দিষ্ট সময় অন্তর খান। এতে পেট ভর্তি থাকায় বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবারের প্রতি ঝোঁক কমবে। ক্রেভিং হতে পারে এমন কোনও খাবার বাড়িতে রাখবেন না। 


*কয়েকদিন যাবতীয় ফুডঅ্যাপ আনইনস্টল করুন। যদি একান্তই দু’একদিন বাইরের খাবার খাওয়ার ইচ্ছে হয় তাহলে গ্রিলড চিকেন, তন্দুর, ধোকলা, রোস্টেট লিট্টি, ইডলি, ধোসা অর্ডার করতে পারেন।  


*নুন খাওয়ার পরিমাণ কমান। রান্নায় যেটুকু দরকার তার চেয়ে বেশি কাঁচা লবণ খাওয়ার প্রয়োজন নেই।


*হজম ক্ষমতা ঠিক রাখতে ডায়েটে প্রোবায়োটিক  ও প্রিবায়োটিক যেমন ফার্মেন্টেড খাবার রাখুন। 


*যে কোনও খাবারের ৩০ মিনিট পরে গ্রিন টি খেতে পারেন। এছাড়া মৌরি চিবোলেও পেট ফাঁপা সহ হজমের সমস্যায় উপকার পাবেন। 


*পেটের চর্বি কমাতে বসা, দাঁড়ানো কিংবা হাঁটাচলার ভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে এমনভাবে বসুন যেন পেটের মাসলগুলো টাইট থাকে। একটানা বসে কাজ করলে অন্তত এক ঘণ্টা অন্তর উঠে ১০ সেকেন্ড হাঁটাচলা করুন। 


ডায়েটের খুঁটিনাটি


ব্রেকফাস্টঃ রুটি, তরকারি খেতে পারেন। সঙ্গে রাখুন প্রোটিন আর স্যালাড।

মিড মর্নিংঃ ব্রেকফাস্টের দু থেকে আড়াই ঘণ্টা পর একটা মরশুমি ফল খান।

লাঞ্চঃ ভাত অথবা রুটির সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাল, তরকারি, মাছ অথবা মাংস, স্যালাড, টক দই খেতে পারেন। নিরামিশাষী হলে ডায়েটে রাখুন পনির বা সোয়াবিন। লাঞ্চের খানিকক্ষণ বাদে খিদে পেলে ফল খান। 

সন্ধের স্ন্যাকস: বালিতে ভাজা পপকর্ন, চিড়ে ভাজা, ড্রাই রোস্ট মাখানা খেতে পারেন।

ডিনারঃ রুটি, সবজি অথবা ডালিয়া কিংবা কিনোয়া খেতে পারেন। খুব বেশি ওজন বেড়ে গেলে স্যুপ কিংবা স্টিমড ভেজিটেবলের সঙ্গে প্রোটিন খান। ডিনারের পর অনেকক্ষণ জেগে থাকার সময়ে ক্রেভিং হলে এক মুঠো ড্রাই ফ্রুটস খেতে পারেন। 

 

ডিটক্স ওয়াটারে ভরসা 


সকালে লেবু ও মধু দিয়ে গরম জল খেতে পারেন। তবে সুগার থাকলে মধু বাদ দিন। এছাড়াও জিরের জল, মেথি ও মৌরির জলও উপকারী। শরীরকে টক্সিনমুক্ত করতে বেশি জল খান। দিনে সাড়ে তিন থেকে চার লিটার জল খাওয়া প্রয়োজন। শুধু জল খেতে ভাল না লাগলে ফল কিংবা সবজি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স ওয়াটারেও চুমুক দিতে পারেন।

নাছোড়বান্দা ক্রেভিং 

মনে রাখবেন, যে কোনও ক্রেভিং শরীরের প্রয়োজনেই হয়ে থাকে। যেমন ধরুন কারওর যদি তৈলাক্ত খাবার খেতে বেশি ইচ্ছে করছে তার মানে তাঁর শরীরে হয়েতো ক্যালসিয়ামের খাটতি হয়েছে। আবার কারওর ব্রেড বা পাস্তার ক্রেভিং হলে তা শরীরে নাইট্রোজেনের অর্থাৎ প্রোটিনের ঘাটতির ইঙ্গিত হতে পারে। স্ট্রেস থাকলেও ক্রেভিংয়ের সমস্যা বাড়ে। খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে ড্রাই ফ্রুটস, খেজুর খান।

সব নিয়ম মানলেও আপনি কেন ওজন কমাতে চান সেবিষয়ে সঠিক ধারণা আছে তো? শুধুমাত্র কারওর চোখে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে কিংবা অন্য কাউকে অনুসরণ করে রোগা হতে গেলে কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে যেতে পারে!