আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজনেসলাইন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বাণিজ্য আলোচকরা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পঞ্চম দফার বাণিজ্য আলোচনা শেষে দেশে ফিরছেন। ১৪ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত চলা এই দফার আলোচনায় কৃষিপণ্য ও অটোমোবাইল খাতে শুল্ক হ্রাস, মার্কিন প্রতিশোধমূলক শুল্ক প্রত্যাহার, এবং কয়েকটি উচ্চ প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, আলোচনা কিছুদিন ভার্চুয়াল মোডে চলবে। তবে এই আলোচনার পেছনে বৃহত্তর একটি ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কাজ করছে—সেটি হল প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিকক শুল্ক যুদ্ধ।

২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ট্রাম্প প্রশাসনের “America First” নীতির অধীনে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে, বিশেষত যেসব দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, কানাডা এবং ভারত সহ বহু দেশ শিকার হয় আমেরিকার প্রতিশোধমূলক শুল্কনীতির। বিশেষ করে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ৫০% পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। সেইসঙ্গে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের জিএসপি (Generalized System of Preferences) সুবিধা বাতিল করে, যার ফলে ভারতের শ্রমনির্ভর রপ্তানি খাত বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে।

আরও পড়ুন: পুরুষ নিষিদ্ধ এই দেশে! চারিদিকে রূপসী নারীর ছড়াছড়ি, সন্তান উৎপাদন হয় কীভাবে? এ এক ইউটোপিয় দ্বীপ!

এছাড়া, চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ধারাবাহিক বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব সরবরাহ চেইনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার তরঙ্গ ভারতীয় অর্থনীতিতেও অনুভূত হয়। বর্তমানে, ভারত চাইছে যুক্তরাষ্ট্র যাতে ভারতের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ২৬% শুল্ক প্রত্যাহার করে এবং স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি খাতে আরোপিত পুরোনো অতিরিক্ত শুল্কও কমায়। ভারতের পক্ষ থেকে এই আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য বিভাগের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়াল। এছাড়া, ভারত শ্রমনির্ভর খাতে শুল্ক ছাড় চায়—যেমন পোশাক, রত্ন ও গয়না, প্লাস্টিক, কেমিক্যালস, চিংড়ি মাছ, তেলবীজ ও ফলমূল। এই সমস্ত পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার বাড়াতে পারলে ভারতের ছোট ও মাঝারি শিল্পের রপ্তানিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বর্তমানে চলমান আলোচনা দুটি ভিত্তি নথির ওপর দাঁড়িয়ে: ১৩ ফেব্রুয়ারির যৌথ বিবৃতি এবং ২১ এপ্রিলের Terms of Reference, যা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভারত সফরের সময় গ্রহণ করা হয়। এই আলোচনার উদ্দেশ্য হলো ১ আগস্টের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। কারণ ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কগুলোর স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হবে। যদি তখন পর্যন্ত কোনও চুক্তি না হয়, তবে আবারও ভারতের রপ্তানির ওপর পুরো মাত্রায় অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ এবং মার্কিন নির্বাচনের উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভারতের পক্ষে এই আলোচনায় কৌশলী ও বাস্তববাদী থাকা জরুরি। বিশ্ব বাণিজ্য আজ শুধু অর্থনীতির নয়, বরং কূটনীতির হাতিয়ার—এ কথা আবারও প্রমাণিত হচ্ছে।