বাঙালি পরিচালক অনুপর্ণা রায় ‘দ্য সংস অফ ফরগটেন ট্রিজ’-এর জন্য ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে হরাইজন বিভাগে সেরা পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেছেন। এই কৃতিত্ব তাঁর আগে কোনও ভারতীয়র নেই। এ ছবির মাধ্যমেই অনুপর্ণার পরিচালনায় অভিষেক। ছবিটি পরিচালকের সহকর্মী অনুরাগ কাশ্যপের হাত ধরে উপস্থাপিত হয় এবং ১ সেপ্টেম্বর ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মর্যাদাপূর্ণ ‘Orizzonti Competition’ বিভাগে প্রদর্শিত হয়। এই বিভাগে সাধারণত কোনও পরিচালকের প্রথম ছবি, তরুণ প্রতিভা, স্বাধীন চলচ্চিত্র এবং কম পরিচিত সিনেমাকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তুলে ধরা হয়।
বাঙালি মেয়ের এই আন্তর্জাতিক সম্মানে সম্মানিত হওয়ায় যারপরনাই গর্বিত পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি। ফেসবুকে নিজের অননুকরণীয় ছন্দে 'ধূমকেতু' পরিচালক লিখলেন, " আপনার সাথে আমার আলাপ নেই। তবে আপনার এই বিপুল সাফল্যে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করছি। আপনি পড়বেনও না হয়তো এই লেখা। তবু লিখে আমার ভালো লাগবে বলে লিখলাম। বাংলার একজন এতো বড়ো এক মঞ্চে সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়াটা অবিস্মরণীয় ও আবেগের। বাংলাকে গর্বিত করেছেন আপনি। আমার ও আমার পরিবারের তরফ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা । ভালো থাকবেন
#AnuparnaRoy #SongsOfTheForgottenTrees"
(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল)
এই ছবির বিষয়ে অনুপর্ণা রায় জানিয়েছেন, তাঁর এই ছবি সব নারীদের উদ্দেশে এক শ্রদ্ধাঞ্জলি—“যাঁরা নীরব থেকেছেন, উপেক্ষিত হয়েছেন বা যাঁদের দমিয়ে রাখা হয়েছে।” এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এই ছবি প্রতিটি সেই নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, যাঁরা কখনওই কণ্ঠ পাননি, যাঁদের দেখা হয়নি বা মূল্যায়ন করা হয়নি। এই জয় এরকম আরও কণ্ঠস্বর, আরও গল্প এবং আরও শক্তির জন্ম দিক, শুধু সিনেমায় নয়, বরং এর বাইরেও।”
ছবিতে দেখানো হয়েছে থুয়ার কাহিনি। থুয়া একজন প্রবাসী মেয়ে যে অভিনেত্রী হতে চায়। যে মুম্বই শহরে নিজের সৌন্দর্য আর বুদ্ধির জোরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। কখনও কখনও তাকে সুযোগ পাওয়ার জন্য সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাকেও ব্যবহার করতে হয়।
এক সময় থুয়া তার বয়সে বড় ধনী প্রেমিকের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ভাড়া দেয় শ্বেতাকে, যে তার মতোই কর্পোরেটে কাজ করা আরেক প্রবাসী। ভিন্ন জগত থেকে আসা এই দুই নারী একই ঘরে থাকতে শুরু করলে এক অদ্ভুত নীরব সহমর্মিতা তৈরি হয়। শহরের ব্যস্ত জীবনের ভিড়েও তারা একে অপরের মধ্যে খুঁজে পায় বোঝাপড়া এবং সান্ত্বনা।
কিন্তু যখন পুরনো স্মৃতি, লুকিয়ে থাকা আকাঙ্ক্ষা আর ক্ষতগুলি সামনে আসে, তখনও এই সম্পর্ক ভেঙে যায় না। বরং ধীরে ধীরে নতুনভাবে গড়ে ওঠে—নিজেকে চিনে নেওয়া, বাঁচার লড়াই, আর অপ্রত্যাশিত এক বন্ধুত্বের গল্প হয়ে।
ছবিতে অভিনয় করেছেন নাজ শেখ এবং সুমি বাঘেল। প্রযোজনায় আছেন বিবংশু রাই, রোমিল মোদি ও রঞ্জন সিং। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন ভূষণ শিম্পি, রবি মান, প্রীতম পিলানিয়া এবং লাভলী সিং।
