আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ড. মোহন যাদবের মন্তব্য ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে ‘মাখনচোর’ (মাখন চোর) বলে সম্বোধনের প্রথার বিরোধিতা করেন। তাঁর মতে, কৃষ্ণ কখনোই মাখন চুরি করেননি, বরং তাঁর শৈশবের ‘মটকি ফোড়’ কাণ্ড আসলে ছিল অত্যাচারী মামা কংসের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহের প্রতীক।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, উজ্জয়িনীর বাসিন্দা মুখ্যমন্ত্রী যাদব বলেন, “মাখনচোর শব্দ উচ্চারণ করাটাই অসম্মানজনক মনে হয়। কৃষ্ণের শৈশবের কাণ্ডকীর্তিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গোকুলের হাজার হাজার গোরুর দুধ, ঘি ও মাখন কংসের বাড়িতে চলে যেত। কৃষ্ণ গোপালদের বলেছিলেন, তোমরা নিজের মাখন খাও, হাঁড়ি ভেঙে দাও, কিন্তু কংসের ঘরে তা যেন না পৌঁছায়। এটা চুরি নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বার্তা।” তিনি আরও বলেন, যশোদামাতার বাড়িতেই ছিল গোরুর বিশাল সম্পদ, তাই কৃষ্ণের কখনো মাখন চুরি করার প্রয়োজন পড়েনি। তাঁর কাছে কৃষ্ণ হলেন বিদ্রোহী, ন্যায়ের সংগ্রামী, কেবল মাখনচোর নন।

সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে মুখ্যমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যা ঘিরে এখন নতুন জনসচেতনতা প্রচার শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সংস্কৃতি দপ্তর  একটি বিশেষ প্রচারাভিযান হাতে নিয়েছে, যেখানে শ্রীকৃষ্ণকে বিদ্রোহী রূপে উপস্থাপন করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা শ্রীরাম তিওয়ারি জানান, “এই প্রচারে আমরা পুরোহিত, বাগ্মী, গল্পকার ও ভজন গায়কদের যুক্ত করব। মানুষকে বোঝানো হবে যে কৃষ্ণের হাঁড়ি-ভাঙা লীলা ছিল অত্যাচার-বিরোধী বিদ্রোহ, কোনো মাখন চুরি নয়।”

আরও পড়ুন: ২০ টাকার জিনিস ১০০ টাকায় বিক্রি করেও আবার 'সার্ভিস চার্জ' কেন?  রেস্তরাঁগুলোকে দিল্লি হাইকোর্টের ধমক!

কংগ্রেস প্রতিবাদ করেছে এই ঘটনায়। অন্যদিকে, এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন বিরোধী দল কংগ্রেস। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা উমঙ্গ সিংহার অভিযোগ করেন,  “মোহন যাদব শ্রীকৃষ্ণের লীলাকে নিজের মতো করে লিখতে চাইছেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কৃষ্ণের মাখনচোর লীলা ভক্তদের আনন্দ দিয়েছে, এখন তিনি সেই ইতিহাস বদলাতে চাইছেন। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।” তিনি আরও কটাক্ষ করেন, “কৃষ্ণকে চোর বলতে আমরা কেউই চাই না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যেন প্রথমে বলেন, কীভাবে তিনি নিজেই জনগণের ম্যান্ডেট চুরি করে সরকার গড়েছেন।”

জন্মাষ্টমীর উৎসব শেষ হতে না হতেই এই মন্তব্য রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পিত “শ্রীকৃষ্ণ পথেয়” ধর্মীয় পর্যটন প্রকল্প ও নতুন প্রচারাভিযানকে ঘিরে বিজেপি নিজেদের সাংস্কৃতিক রাজনীতি আরও শক্তিশালী করতে চাইছে বলে অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।
অন্যদিকে, ভক্তদের একাংশ এখনো ভালোবাসার সুরে কৃষ্ণকে ‘মাখনচোর’ বলতেই স্বচ্ছন্দ। ফলে সরকার-পৃষ্ঠপোষিত প্রচারের ফলে প্রাচীন ভক্তি-সংস্কৃতির সঙ্গে সংঘাত দেখা দিতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সব মিলিয়ে, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী-পরবর্তী এই মন্তব্য রাজ্যে সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।