মোহনবাগান - ১ (৫) (আপুইয়া)
ইস্টবেঙ্গল - ১ (৪) (হামিদ)
সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: ইস্টবেঙ্গলের ডার্বি জয়ের হ্যাটট্রিক অধরা। ফিরল ২২ বছর আগের ইতিহাস। শেষবার ২০০৩ সালে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান। এবারও তার পুনরাবৃত্তি। টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে জিতে আইএফএ শিল্ড জিতল মোহনবাগান। শান্ত গ্যালারি মাতল উচ্ছ্বাসে। ঘুঁচল বিতর্ক। মিলিয়ে গেল ক্ষোভ-বিক্ষোভ। গ্যালারিতে ফাটল বাজি। বেরোল সবুজ মেরুন পতাকা। টাইব্রেকারে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করেন মিগুয়েল, কেভিন, মহেশ, হিরোশি। জয় গুপ্তর শট বাঁচান বিশাল কাইথ। মোহনবাগানের হয়ে গোল রবসন, মনবীর, লিস্টন, দিমিত্রি এবং মেহতাবের। তবে গ্যালারিতে উচ্ছ্বাস হলেও আবেগের বিস্ফোরণ ছিল না। নব্বই মিনিটের শেষে ১-১। হামিদ আহদাদের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। বিরতির আগেই সমতা ফেরান আপুইয়া। বাকি সময়টা কয়েকটা বিক্ষিপ্ত আক্রমণ দুই দলের। কিন্তু তেমন ওপেন সুযোগ তৈরি হয়নি। খেলার মান আহামরি নয়। মূলত বল মাঝমাঠেই ঘোরাফেরা করে। ১২০ মিনিটের ফুটবলের শেষেও ১-১। তবে শেষদিকে মোহনবাগান বেশ কয়েকটা সুযোগ তৈরি করে। দুই দলের ম্যাচ ফিটনেস নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। ম্যাকলারেন, কামিন্স বোতলবন্দী। রবসনও তেমন সুযোগ পাননি। বরং, অনেকটাই ফ্রি ফ্লোয়িং ফুটবল মিগুয়েলের। তবে সাপোর্টিং প্লের অভাব ছিল। প্রথমার্ধ বাদ দিলে বাকি ম্যাচ ম্যাড়ম্যাড়ে।
শিল্ড ফাইনালে ডার্বি। তবুও মাঠ ভরেনি। সচরাচর এই ছবি বিরল। সমর্থকদের লড়াইয়ে মোহনবাগানকে টেক্কা দেয় ইস্টবেঙ্গল। ফাইনালের আগের সন্ধেয় ক্লাব তাঁবুতে দুই শীর্ষকর্তার বৈঠক সাপোর্টারদের মাঠে ফেরাতে পারেনি। সমর্থকরা এলেও সবুজ মেরুন গ্যালারি পুরো ভরেনি। গোটা ম্যাচে শান্ত ছিল বাগান গ্যালারি। তবে প্রিয় দল সমতা ফেরানোর পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে গ্যালারি। বাকি সময়টা চুপচাপ। গ্যালারি প্রথমবার জেগে ওঠে ৮৫ মিনিটে। তবে এদিন বাগান গ্যালারিতে কোনও টিফো চোখে পড়েনি। বরং, নজর কাড়ে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির প্ল্যাকার্ড। এএফসির ম্যাচ খেলতে ইরানে না যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ। জ্বলজ্বল করছিল, 'আমরাই ভিনদেশিদের বিরুদ্ধে এই দেশের জবাব, আমাদের ভিনদেশিদের বিরুদ্ধে পালানোর স্বভাব।'
দুই স্প্যানিয়ার্ডের মগজাস্ত্রের লড়াইয়ের অন্তরালে ছিল দুই ব্রাজিলীয়র টক্কর। দুই এককালীন সতীর্থের দ্বৈরথ। কিন্তু শুরুতে দু'জনকেই বেঞ্চে রাখেন হোসে মোলিনা এবং অস্কার ব্রুজো। প্রথমদিকে বল ধরে খেলার চেষ্টা করে ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধে দুই স্প্যানিশ কোচের লড়াইয়ে জয়ী অস্কার। হ্যাটট্রিকের সুযোগ মিস হামিদ আহদাদের। সেক্ষেত্রে প্রথমার্ধেই শেষ হয়ে যেত খেলা। অবশ্য কয়েকটা বিক্ষিপ্ত আক্রমণ ছিল মোহনবাগানেরও। অস্কারের স্ট্র্যাটেজিতে মাঝমাঠের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কামিন্স, ম্যাকলারেনদের। যার ফলে হাতেগোনা কয়েকবার বল পায় দুই অজি বিশ্বকাপার। তারমধ্যেও গোল লক্ষ্য করে পাঁচ-ছ'টি শট নেয় বাগান। যদিও কোনওটাই লক্ষ্যে ছিল না। তারমধ্যে সেরা সুযোগ ম্যাচের ৭ মিনিটে। ম্যাকলারেনের শট বাঁচান প্রভসুখন গিল। তবে ম্যাচের দ্বিতীয় কোয়ার্টার থেকে ম্যাচের দখল নিয়ে নেয় লাল হলুদ। বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ পায়। ডান দিক থেকে গতি বাড়িয়ে উঠলেও, শেষপর্যন্ত মিস পাস লালরিনডিকার। নাওরেম সামনে একা বিশাল কাইথকে পেয়েও হাতে তুলে দেন। ম্যাচের গতির বিরুদ্ধে গিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল মোহনবাগানের সামনে। কিন্তু গ্যালারিকে হতাশ করেন জেসন কামিন্স। ম্যাচের ৩২ মিনিটে ম্যাকলারেনকে ফাউল করেন আনোয়ার। বক্সের মধ্যে পেছন থেকে ঠেলেন। পেনাল্টি দেন রেফারি। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে স্পট কিস মিস কামিন্সের।
ঘটনার দু'মিনিটের মধ্যে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে গোল। রশিদের থ্রু থেকে মহেশের মাইনাস। ডান পায়ের আলতো টোকায় গোল হামিদের। প্রথমার্ধের পরের ৭-৮ মিনিট লাল হলুদের ঝড়। ম্যাচের ৪২ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারত ইস্টবেঙ্গল। মহেশের পাস থেকে হামিদের বাঁ পায়ের শট পোস্টে লাগে। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে আরও একটি সিটার মিস। যা দেখে মাথায় হাত না দিয়ে পারেননি অস্কার। মহেশের থেকে লালরিনডিকার পা ছুঁয়ে হামিদের শট বাইরে যায়। নিশ্চিত গোল। প্রথমার্ধেই হ্যাটট্রিকের সুযোগ মিস ইস্টবেঙ্গলের। লাল হলুদের মিসের বহরের মধ্যে প্রথমার্ধেই সমতা ফেরায় মোহনবাগান। ডানদিক থেকে লিস্টনের উদ্দেশে বল বাড়ান সাহাল। গোয়ান মিডিওর পাস থেকে আপুইয়ার বাঁ পায়ের দূরপাল্লার শট ক্রসপিসে লেগে গোলে ঢুকে যায়। এদিন ডাহা ব্যর্থ ম্যাকলারেন এবং কামিন্স।
ম্যাচের ৫৪ মিনিটে লিস্টনের মাইনাসে কামিন্স পা ছোঁয়ানোর আগেই ক্লিয়ার করে দেন আনোয়ার। ম্যাচের ৬০ মিনিটে কামিন্সের পরিবর্তে নামেন রবসন। কিন্তু খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। বরং, অনেক বেশি সচল ছিলেন মিগুয়েল। তাসত্ত্বেও শেষ মিনিটে গোলের ঠিকানা লেখা ফ্রিকিক রবসনের। কিন্তু মেহতাবের হেড বাঁচান প্রভসুখন। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে হিরোশি, মিগুয়েল, জয়কে নামান অস্কার। কিন্তু জাপানি স্ট্রাইকার বিশেষ নজর কাড়তে পারেনি। যদিও প্রথম টাচে গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন হিরোশি। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে গোলের সুযোগ পায় মোহনবাগান। কিন্তু ম্যাকলারেন বল ঠেলার আগেই বিপদমুক্ত করেন রাকিপ এবং কেভিন। ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালেও ম্যাড়ম্যাড়ে। শুরুটা ভাল হলেও পরের দিকে রিদিম পড়ে যায়।
