আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তর প্রদেশের বারাবাঁকিতে সোমবার ভোররাতে ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। হায়দারগড় এলাকায় অবস্থিত আওসানেৎশ্বর মহাদেব মন্দিরে ঘটনাটি ঘটেছে। শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সোমবারে জলাভিষেক করতে আসা হাজারো ভক্তের ভক্তি ও প্রার্থনা মুহূর্তেই পরিণত হয় চিৎকার ও মৃত্যুর করুণ দৃশ্যে। সূত্রে জানা যায়, উচ্চ-ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন মন্দির প্রাঙ্গণে থাকা একটি টিনের চালার ওপর ছিঁড়ে পড়ে। ঘটনার ফলে মন্দির চত্বরে হঠাৎ বিদ্যুৎ প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্ক এবং হুড়োহুড়িতে দু’জন ভক্ত নিহত হন। ৪০ জনেরও বেশি আহত হন।

রবিবার গভীর রাত ২:৩০ নাগাদ ঘটে এই দুর্ঘটনা। শ্রাবণ মাসের তৃতীয় সোমবার বিশেষ পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। এই উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে উপস্থিত হন এখানে। আহত অর্জুন কুমার বলেন, 'আমরা জল দিতে যাচ্ছিলাম, তখন হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হয়। এরপরই বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ একে একে পড়ে যেতে শুরু করে, কেউ কেউ সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল।' বর্তমানে তিনি হায়দারগড় কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শশাঙ্ক ত্রিপাঠী জানান, একটি বাঁদরের দল বিদ্যুৎ লাইনের ওপরে লাফ দিলে সেটি ছিঁড়ে যায় এবং টিনের চালার ওপর পড়ে যায়। এর ফলে হঠাৎ করে মন্দির এলাকায় বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, এবং ভয়ে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে, যার ফলে পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় রমেশ কুমার (৩৫) এবং প্রশান্ত কুমার (১৬) নামে দুই ব্যক্তি মারা যান এবং ৪০ জনের বেশি আহত হন।

চোখের সামনে এই দু্র্ঘটনার অভিজ্ঞতায় শালিনী দেবী জানান, 'আমরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন হঠাৎ চালার ওপর আগুনের মত ঝলক দেখা যায়। আমি একটি ঝাঁকুনি অনুভব করি। দেখি মানুষ চিৎকার করছে ও পড়ে যাচ্ছে। আমার বোন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়।  আমার কাকিমা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।' নিহত রমেশ কুমারের ভাই মুলচাঁদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, 'আমরা আগেই পুলিশকে বলেছিলাম ওই তার থেকে ধোঁয়া উঠছে। কিন্তু তাঁরা বলেন এটা ওভারলোডিংয়ের কারণে হচ্ছে, ঠিক হয়ে যাবে। কয়েক ঘণ্টা পরই সেই তার ছিঁড়ে পড়ে আমার ভাইয়ের প্রাণ নেয়।'

হায়দারগড় সিএইচসি-তে ভর্তি আহতদের মধ্যে ১২ বছর বয়সী পলকের মা কাকুতি-মিনতি করে চিকিৎসকের কাছে অনুরোধ জানান, 'আমার মেয়েকে ভালো করে চিকিৎসা করুন। আর কিছু চাই না। ' পুলিশ ২৯ জন আহতকে ইতিমধ্যেই হায়দারগড় সিএইচসি-তে নিয়ে আসে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনকে ত্রিবেদিগঞ্জ, ৬ জনকে কোঠি সিএইচসি এবং ৫ জন গুরুতর রোগীকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই জন হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা যান। আহতদের সংখ্যা ৪০-এর বেশি। রাতভর চিকিৎসা চলে। এমনকি অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের ডেকে পাঠানো হয়।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেন। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বার্তা , 'বারাবাঁকির আওসানেৎশ্বর মহাদেব মন্দিরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। সব ধরণের সহায়তা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।'

উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য এই ঘটনাকে 'গভীরভাবে দুর্ভাগ্যজনক' বলেছেন।' হরিদ্বারে মানসা দেবী মন্দিরে একদিন আগে দুর্ঘটনা ঘটেছে, আর আজ বারাবাঁকিতে। ভক্তি ও বিশ্বাস মানুষের ভিড় বাড়াচ্ছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও বাড়াতে হবে।' তিনি বলেন। 

বারাবাঁকি মন্দিরের এই ঘটনা হরিদ্বারের মানসা দেবী মন্দিরে রোববার সকালে ঘটা পদপিষ্টের দুর্ঘটনার ঠিক একদিন পরেই ঘটে। এই ব্যাক-টু-ব্যাক দুর্ঘটনাগুলি বড় মন্দিরগুলোতে ভিড় ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসে যখন ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ মাঝরাতে আচমকা ঘরে জলের তোড়, ঠেকাতে গিয়ে পরিবার শুদ্ধ শেষ, হিমাচলে মাত্র দশ মাসের শিশু পরিবারহারা 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্দির চত্বরে উচ্চ-ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইন থাকা এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণের অভাব গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে ভিড়ের সময়। স্থানীয় বাসিন্দা ও ভক্তরা স্থায়ী সমাধানের দাবি তুলেছেন। তারগুলোকে ভূগর্ভস্থ করা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য পেশাদার ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিও উঠেছে।

মন্দির কমিটির সদস্য মহন্ত বিজয় গিরি বলেন, 'রাত ১টায় মন্দির খোলা হয়েছিল, এক ঘণ্টার মধ্যেই ভিড় ২০০০-এর বেশি হয়ে যায়। তারপরে হঠাৎ দুর্ঘটনাটি ঘটে। হঠাৎ বাঁদরেরা তারে ঝাঁপ দেয়। এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।'

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই মনে করেন, আগেভাগে সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই বিপর্যয় এড়ানো যেত। ঘটনার জেরে মৃতদের পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়ে। বর্তমানে  প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এমন ভয়াবহ ঘটনা এড়াতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।