আজকাল ওয়েবডেস্ক: সময়টা তখন ১৯৯৫ সাল। পুরুলিয়া শহরে কলেজ পড়ুয়া অংশুমান করের সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ‘নাটমন্দির’ পত্রিকার। অংশুমানের সঙ্গী ছিলেন তাঁর কলেজেরই কয়েকজন বন্ধু। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত এই পত্রিকাটি একসময় হয়ে উঠেছিল নয়-এর দশকের অন্যতম প্রধান কবিতাপত্র।
কোনওরকম অর্থ মূল্য ছাড়াই এই পত্রিকাটি একসময় পড়তে দেওয়া হত পাঠকদের। আজ পর্যন্ত একটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনও এই পত্রিকায় ছাপা হয়নি। এই পত্রিকার শততম সংখ্যাটি রবিবার প্রকাশ পেল কলকাতা শহরের একটি প্রেক্ষাগৃহে। ১০০তম সংখ্যাটির প্রকাশ করলেন কবিতাপাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদক যূথিকা চৌধুরী।
শততম সংখ্যাটির প্রকাশ উপলক্ষ্যে দু-দিন ধরে আয়োজন করা হয়েছে কবিতা উৎসবের। উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি সুজিত সরকার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা জুড়ে একশোরও বেশি কবি এই উৎসবে অংশ নিয়েছেন। কবিরা একদিকে যেমন এসেছিলেন জলপাইগুড়ি থেকে, তেমনই এসেছিলেন কাকদ্বীপ থেকেও।
১০০তম সংখ্যা প্রকাশ উপলক্ষ্যে ‘নাটমন্দির’ পত্রিকার তরফে ২১ বছরের কমবয়সী কবিদের মধ্যে একটি কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম তিনে জায়গা করে নেন হুগলির দেবজ্যোতি সিংহ রায়, বীরভূমের সুপ্রতীক ঘোষ ও পুরুলিয়ার প্রান্তিক দেওঘরিয়া।
তাদের হাতে এই উৎসবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। নয়-এর দশকের কবি চন্দ্রাণী বন্দোপাধ্যায়কে দেওয়া হয় ২০২৫ সালের ‘নাটমন্দির সম্মান’। পাশাপাশি, ‘কবিতায় ছবিই কি মুখ্য?’ এই বিষয় নিয়ে উৎসবে রবিরার আয়োজন করা হয় একটি আলোচনা সভার।
সভায় আলোচক ছিলেন সৌভিক গুহ সরকার, কস্তুরী সেন ও তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়। সঞ্চালক ছিলেন তুষার পণ্ডিত। সোমবারও একটি বিতর্ক সভা রয়েছে এই উৎসবে। এর বিষয়, ‘সভার মতে, অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে যাচ্ছে বাংলা কবিতার’।
অংশ নিচ্ছেন সেলিম মল্লিক, শুভম চক্রবর্তী, প্রসূন মজুমদার ও সুদেষ্ণা মৈত্র। সঞ্চালক ছিলেন অনিশ্চয় চক্রবর্তী। এই উৎসবেই প্রকাশিত হয় অংশুমান করের নতুন উপন্যাস ‘পাখিমানুষের ঘর’।সপ্তর্ষি প্রকাশনার প্রকাশিত এই উপন্যাসের বিষয়ে মরিচঝাঁপির গণহত্যা।
এই উপন্যাসটির উদ্বোধন করেন মরিচঝাঁপি গবেষক মধুময় পাল। তিনি বলেন, ‘অংশুমান উপন্যাসটি লিখেছেন গবেষণা করে এবং তথ্যবিকৃতি না ঘটিয়ে। টানটান এই উপন্যাসটি ধরে রেখেছে একটি সময়ের ঘটনাকে।
এই বিষয়ের ওপর ভবিষ্যতে যত উপন্যাস লেখা হবে ততই উপকৃত হবেন বাংলার মানুষ। একটি অনালোচিত অধ্যায়ের ওপর আলো পড়বে’। দু’দিনের এই উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন কবি আত্রেয়ী চক্রবর্তী ও সহেলী চৌধুরী।
নাটমন্দির পত্রিকার প্রধান সম্পাদক অংশুমান কর জানান, ‘ছাত্রাবস্থায় টিউশন পড়াতাম শুধু এই পত্রিকাটি করব বলে। সেই পত্রিকার ১০০তম সংখ্যা প্রকাশ পেল। আমি সত্যিই খুশি। তবে শতরানের এই কৃতিত্বের গৌরব আসলে নাটমন্দিরের সম্পাদকমণ্ডলী, লেখক, গ্রাহক ও পাঠকদের।’
সোমবারের বিতর্ক সভাটি জমে উঠেছিল দুই পক্ষের তীব্র যুক্তি তর্কে। শেষ পর্যন্ত ‘দর্শকদের রায়ে অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে বাংলা কবিতার মুখ ঢেকে যাচ্ছে না’ জয়ী হয় এই মতটিই। দু-দিনই এই উৎসবের আকর্ষণ ছিল মূলত তরুণ কবিদের কবিতাপাঠ।
গোটা উৎসব জুড়ে কেবলমাত্র কবিতা শুনতেই এসেছিলেন বহু মানুষ। এখনকার কবিতা উৎসব গুলিতে যে ছবি প্রায় বিরল হয়ে যেতে বসেছে সেই চিত্রকেই ফিরিয়ে ‘নাটমন্দিরের’ শততম সংখ্যার উৎসব।
