আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক সমাজে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ফলে পর্নোগ্রাফি ও হস্তমৈথুন বহু তরুণের কাছে দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে “নোফ্যাপ” আন্দোলন, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা পর্ন ও হস্তমৈথুন থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিরত থাকার চেষ্টা করেন। একজন তরুণের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। তিনি দাবি করেছেন, টানা ১৩ মাস হস্তমৈথুন না করেই কাটিয়েছেন, এবং এই সময়ে তাঁর জীবনে এসেছে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন। তাঁর বক্তব্য, “যখন হস্তমৈথুন বন্ধ রাখি, তখন আমার মনোযোগ বাড়ে, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং কাজের প্রতি আগ্রহ দ্বিগুণ হয়।”
পর্নোগ্রাফির প্রভাব ও উদ্বেগ
১৯ বছর বয়সে তিনি বুঝতে শুরু করেন যে অতিরিক্ত পর্ন দেখা তাঁর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কৈশোরে ইন্টারনেটে সাধারণ ‘লিঞ্জারি’ খোঁজার মাধ্যমেই তাঁর প্রথম পর্নের সঙ্গে পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একা ঘরে থাকলেই তিনি বাধ্যতামূলকভাবে পর্ন দেখতে শুরু করতেন। নিজের প্রতি ঘৃণা ও আসক্তির শঙ্কা থেকেই তিনি বিকল্প খুঁজতে শুরু করেন।
নোফ্যাপ আন্দোলনের উত্থান
২০১১ সালে রেডিট ব্যবহারকারী আলেকজান্ডার রোডস একটি পোস্টের মাধ্যমে এই আন্দোলন শুরু করেন। পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর তৈরি হয় একটি বিশাল অনলাইন কমিউনিটি, যাদের ডাকা হয় “ফ্যাপস্ট্রোনটস”। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ৩ লক্ষেরও বেশি। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন এবং দাবি করেন, নোফ্যাপের মাধ্যমে তারা পর্ন-প্ররোচিত যৌন অক্ষমতা (Porn-Induced Erectile Dysfunction) থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: (অ)নিয়মিত যৌনতায় মগ্ন জেন জি, নতুন প্রজন্মের নতুন যৌন পরিচয়- ‘গ্রে-সেক্সুয়াল’
ইতিবাচক প্রভাব- তরুণটির মতে, নোফ্যাপে অংশগ্রহণ করার ফলে তিনি আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন, মাথা ঠাণ্ডা ও পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারছেন, মেয়েদের সঙ্গে সহজে কথা বলতে পারছেন, এবং সবচেয়ে বড় কথা, নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন। প্রথম সপ্তাহেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় বলে তিনি জানিয়েছেন। টেলিভিশনের আকর্ষণীয় নারী চরিত্র হোক বা ইউটিউব ভিডিও—সবকিছুই তাঁকে প্রলুব্ধ করত। প্রত্যাখ্যাত হলে বা মানসিক চাপ এলে তিনি হস্তমৈথুনের প্রলোভনে পড়তেন।
সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ
টানা এক বছরের বেশি সময় বিরত থাকার পর তিনি কাজে অতিরিক্ত চাপ ও একাকিত্বের কারণে আবার ভেঙে পড়েন। তবে তিনি এটিকে “এক মুহূর্তের দুর্বলতা” বলে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে তিনি আবারও নতুন করে শুরু করেছেন এবং এবার তাঁর লক্ষ্য ১৮ মাস টানা হস্তমৈথুন ও পর্নমুক্ত থাকা। দীর্ঘমেয়াদে তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো—আজীবন হস্তমৈথুন ত্যাগ। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, নোফ্যাপ ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে, তবে অতিরিক্ত অপরাধবোধ বা চাপ সৃষ্টি করলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে। তবুও নোফ্যাপ আন্দোলন আজকের দিনে একটি উল্লেখযোগ্য অনলাইন সাংস্কৃতিক প্রবাহে পরিণত হয়েছে, যা বিশেষ করে তরুণ পুরুষদের জীবনে বড়সড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
