হাসির আড়ালে লুকিয়ে ছিল তাঁর মেধা, সংবেদনশীল মন আর গভীর মানবিকতা। ‘ম্যায় হুঁ না’, ‘কল হো না হো’, ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’, ‘জানে ভি দো ইয়ারো’-এর মতো একের পর এক দর্শকপ্রিয় ছবিতে তিনি হাসিয়েছেন, মুগ্ধ করেছেন। টেলিভিশনে ‘ইয়ে যা হ্যায় জিন্দেগি’ আর ‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’ তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল ঘরে ঘরে। সেই সতীশ শাহ আর নেই। ৭৪ বছর বয়সে কিডনি বিকল হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা।
চার দশকেরও বেশি দীর্ঘ কেরিয়ারে শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন সতীশ। কিন্তু একসময় নিজের চেহারাকেই ‘সমস্যা’ বলে মনে করতেন তিনি! ২০২৩ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেছিলেন, “আমি যখন এফটিআইআই (FTII) থেকে পাশ করি, তখন অভিনেতাদের আলাদা আলাদা ঘরানায় ভাগ করা হতো। আমি কোনও ঘরানাতেই পড়তাম না। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে আমি অনেকটাই লম্বা আর ভারী চেহারার, খলনায়কের জন্য মুখটা খুব নরম, আর নায়ক হিসেবে দেখতে তেমন আকর্ষণীয় নই। তাই আমার সংগ্রাম ছিল সবচেয়ে কঠিন। মানুষ আমাকে অভিনেতা ভেবে গ্রহণ-ই করত না।”
আরও বলেছিলেন, “অনেকেই ভাবতেন আমি হয়তো চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক বা পরিচালক। তাই আমার ব্যক্তিত্ব, চেহারাটাই আমার বিপক্ষে কাজ করেছিল। এখন যখন কেউ বলে, আমার ব্যক্তিত্ব আমাকে কেরিয়ার গড়তে সাহায্য করেছে কি না, আমি বলি তখন এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় অসুবিধা।”
১৯৮৪ সালে টেলিভিশন সিটকম ‘ইয়ে যা হ্যায় জিন্দেগি’-তেই বড় সুযোগ পান সতীশ। সেখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন প্রায় ৫৫টি ভিন্ন চরিত্রে! প্রতিটি চরিত্রে আলাদা ভঙ্গি, উচ্চারণ আর হাস্যরসে ভরা। ধারাবাহিকটি চলেছিল দু' বছরেরও বেশি, আর হয়ে ওঠে দারুণ জনপ্রিয়। পরে ‘ফিল্মি চক্কর’ ও ‘ঘর জামাই’–এও দর্শকের মন জয় করেন তিনি। তবে ‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’ তাঁকে পৌঁছে দেয় এক অনন্য উচ্চতায়, যেখানে তিনি হয়ে ওঠেন একেবারে পরিবারের মানুষ।
বড়পর্দায় সতীশ শাহের সূচনা ১৯৭০ সালে ‘ভগবান পরশুরাম’–এ ছোট চরিত্রে। এরপর ‘উমরাও জান’ এবং ‘জানে ভি দো ইয়ারো’–তে কমিশনার ডি’মেলো চরিত্রে অভিনয় করে তিনি চিরস্মরণীয় হন। এরপর একে একে ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’, ‘জুড়ওয়া’, ‘হিরো নাম্বার ১’, ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’, ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’, ‘ওম শান্তি ওম’, ‘ম্যায় হুঁ না’- প্রায় প্রতিটি হিট ছবিতেই তাঁর উপস্থিতি ছিল এক টুকরো আনন্দের পরশ। তাঁর শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালের ‘হমশকলস’ ছবিতে, যেখানে সহঅভিনেতা ছিলেন সাইফ আলি খান, রীতেশ দেশমুখ, রাম কাপুর, তামন্না ভাটিয়া, ঈশা গুপ্তা ও বিপাশা বসু।
‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’-এর নির্মাতা জে. ডি. মাজেঠিয়া জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন সতীশ শাহ। কিডনির অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত কিডনি বিকল হয়ে প্রয়াত হন তিনি। সতীশ শাহের প্রয়াণে বলিউডে নেমেছে গভীর শোকের ছায়া। ফারাহ খান, করণ জোহর, জনি লিভারের মতো সহকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন তাঁদের শোক ও স্মৃতি।
