আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের যুদ্ধ বিমানগুলো বৃহস্পতিবার রাতের দিকে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। এই হামলার লক্ষ্য হিসেবে মূলত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র অবস্থানগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান সরকার এই হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি।

স্থানীয় সূত্র ও বাসিন্দাদের বিবৃতিতে জানা গেছে, কাবুলের কেন্দ্রীয় এবং উত্তর অংশে দারুণ বিস্ফোরণের শব্দ এবং নিচু উচ্চতায় উড়ন্ত বিমানের আওয়াজ  শোনা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে একাধিক বিস্ফোরণের আওয়াজ এবং বাড়ি কেঁপে ওঠার দৃশ্য ধরা পড়েছে। অনেক প্রত্যক্ষদর্শী এই রাতকে “হট্টগোলপূর্ণ রাত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আফগান তালিবান  মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক পোস্টে বিস্ফোরণের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কাবুল শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে কেউ চিন্তা করবেন না, সব ঠিক আছে। তদন্ত চলছে, এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতির রিপোর্ট নেই।” পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামলাকে “নিখুঁত বিমান অভিযান” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে পাকিস্তান বিমান বাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক  এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

কিছু সংবাদসংস্থা উল্লেখ করেছে, হামলার লক্ষ্য হতে পারে টিটিপি নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ, যিনি আফগানিস্তানের ভূখণ্ড থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু অপ্রমাণিত দাবি প্রকাশিত হয়েছে যে তিনি নিহত হয়েছেন। তবে পরে মেহসুদের একটি অডিও বার্তা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তিনি তার মৃত্যু বা অদৃশ্যতার দাবি অস্বীকার করেছেন।

আরও পড়ুন: ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ, গাজায় ইজরায়েলের গণহত্যার সমর্থনকারী ২০২৫ শান্তিতে নোবেল প্রাপক মারিয়া কোরিনা মাচাদো?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের ধোঁয়া ও ধ্বংসাবশেষের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। কিছু প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের ক্ষতি হতে পারে। তবে আফগান কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বা হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেনি। হামলার পর তালেবান-সম্পর্কিত চ্যানেলগুলো তাদের সমর্থকদের সতর্ক করেছে এবং পাকিস্তানে সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতির জন্য বলা হয়েছে। এটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।

এর আগে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ জাতীয় সংসদে বলেন, দেশটির ধৈর্য্য শেষ হয়েছে। তিনি কাবুলকে অভিযোগ করেছেন যে, আফগান ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী আশ্রয় নিচ্ছে, যারা সীমান্তবর্তী হামলার সঙ্গে জড়িত। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “পর্যাপ্ত হয়েছে,” এবং পাকিস্তান আর আফগান মাটিতে সন্ত্রাস সহ্য করবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক প্রাক্তন বিবিসি সাংবাদিক কাবির হাকমাল জানান, বিস্ফোরণের পর পূর্ব কাবুলের জেলা ৮-এ গুলি চালানোর আওয়াজও শোনা গেছে, এবং কয়েক মিনিট ধরে বিমান চলাচলের শব্দ অব্যাহত ছিল। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পরস্পর বিভ্রান্তিকর  রিপোর্ট ছড়িয়েছে। কেউ দাবি করেছেন, “আজ রাত পাকিস্তান তালিবান  নেতৃত্বকে কঠোরভাবে শাস্তি দিচ্ছে,” আবার অনেকে এগুলোকে অতিরঞ্জিত বা অপ্রমাণিত হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে।

যদি হামলা সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি হবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কাবুলে সরাসরি বিমান অভিযান চালানোর প্রথম জানা ঘটনা, যা তালেবান শাসনামলের প্রতি দেশটির অবস্থানকে আরও কঠোর ও তীব্র করে তুলবে।