ভালবাসা মানে শুধু সম্পর্ক নয়, বিশ্বাসের বন্ধনও বটে। কিন্তু অনেক সময় মানুষ কোনও সম্পর্কে এমন ভয় বা ট্রমার শিকার হন যে পরবর্তীকালে আর অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। যা বিশেষ করে প্রেমের সম্পর্কে আরও প্রবল হয়ে ওঠে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় ‘পিস্ট্যানথ্রোফোবিয়া’ অর্থাৎ অন্যের প্রতি বিশ্বাস হারানোর ভয়।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, অতীতের বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা বা গভীর মানসিক আঘাত থেকে এই ভয় জন্ম নিতে পারে। একবার কেউ যদি সম্পর্কে প্রতারিত হন, তাঁর মনে একটি স্থায়ী ভয় তৈরি হয়। ‘আবার যদি একই ঘটনা ঘটে?’ সেই ভয়ই পরবর্তীকালে নতুন কাউকে বিশ্বাস করতে বাধা দেয়।

আরও পড়ুনঃ বাতকর্মে কমে উচ্চ রক্তচাপ, শরীর থাকে তরতাজা! লজ্জা না পেয়ে জানুন বায়ুত্যাগ করলে পাবেন আর কী উপকার

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের আচরণে কিছু স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়। তাঁরা নতুন সম্পর্কে জড়াতে চান না কিংবা কেউ কাছে এলে অস্বস্তি বোধ করেন। এমনকী নতুন মানুষদের প্রতি অযৌক্তিক সন্দেহ, ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলা বা কথোপকথনে দূরত্ব বজায় রাখাও দেখা যায়। অনেক সময় তাঁরা নিজের আবেগ প্রকাশ করতে ভয় পান, যেন আবার কষ্ট না পেতে হয়।

‘পিস্ট্যানথ্রোফোবিয়া’কে এখনও আলাদা মানসিক ব্যাধি হিসেবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবুও দীর্ঘদিন ধরে যদি এমন ভয়, উদ্বেগ বা এড়িয়ে চলার প্রবণতা থাকে এবং তা দৈনন্দিন জীবন বা সম্পর্কে প্রভাব ফেলে তাহলে মনোবিদ বা থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া উচিত।

এক্ষেত্রে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। এই থেরাপির মাধ্যমে সেই ব্যক্তি ধীরে ধীরে নিজের ভয়কে চিনতে ও তা মোকাবিলা করতে শেখেন। প্রয়োজন হলে উদ্বেগ বা হতাশার জন্য ওষুধও দেওয়া হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পিস্ট্যানথ্রোফোবিয়া মানে দুর্বলতা নয়, বরং এক ধরনের মানসিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা অতীতের আঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে চায়। তবে এই ভয় যদি জীবনে সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন তা ভাঙার চেষ্টা জরুরি। নিজের অনুভূতি সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করা, বন্ধু বা পরিবারের সমর্থন নেওয়া এবং থেরাপির সাহায্যে ধীরে ধীরে আবার বিশ্বাস গড়ে তোলা- এই ভয় কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আসলে বিশ্বাস হারানো কষ্টের, কিন্তু তা পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব নয়। সময়, ধৈর্য ও সঠিক মানসিক সহায়তা- এই তিনেই সম্ভব আবার ভালবাসায় ভরসা ফিরে পাওয়া।