আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স ষাটের কোঠায়, তবুও যৌন জীবনে কোনও অনীহা নেই। স্ত্রী-সহ যৌনতায় অংশ নিতে পারছেন যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যে, যৌন সঙ্গমের সময়সীমাও দীর্ঘ—৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী, যার মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট সহবাস। এই বয়সে এমন স্বাস্থ্যবান যৌনজীবন সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু তবুও এক অস্বস্তিকর সমস্যা তাড়া করে চলেছে অনেক পুরুষকে—অর্গাজমে নেই সেই তৃপ্তি!
সম্প্রতি এক ব্যক্তি তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, যৌন সঙ্গমে কোনও সমস্যা না থাকলেও, চূড়ান্ত মুহূর্তে অর্থাৎ অর্গাজমের সময় এক ধরনের ‘অসম্পূর্ণতা’ বা ‘হতাশা’ অনুভব করেন তিনি। তাঁর মতে, এই মুহূর্তটা অত্যন্ত তাড়াতাড়ি ঘটে যায় এবং এর আনন্দ খুব সীমিত হয়, যেন ‘প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন’-এর মতো। অথচ সহবাসের সময় দীর্ঘ এবং নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই থাকে। এই সমস্যার পেছনে শারীরিক ও মানসিক—দুই ধরনের কারণ থাকতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ওষুধের প্রভাব হতে পারে প্রধান কারণ
অনেক সময় কিছু ওষুধ—চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া হোক বা ওভার-দ্য-কাউন্টার—অর্গাজমের ধরনে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, ডিপ্রেশন বা মানসিক রোগের ওষুধ (যেমন: অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, অ্যান্টিসাইকোটিক), কিংবা মূত্রাশয় বা স্নায়ুর ওষুধ এই ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে কমে যেতে পারে যৌন তৃপ্তি
বিশেষজ্ঞ মনোবিদ পামেলা স্টিফেনসন কনোলি বলেন, “শক্তিশালী অর্গাজমের সঙ্গে হরমোন বিশেষত টেস্টোস্টেরনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।” বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়, যাকে হাইপোগোনাডিজম বলা হয়। এর ফলে যৌন ইচ্ছা, শক্তি এবং অর্গাজমের তীব্রতা হ্রাস পায়। এমনকি থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিও (হাইপোথাইরয়েডিজম) এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
মানসিক চাপ ও পারফরম্যান্স উদ্বেগেও রয়েছে ভূমিকা
শারীরিক কারণ ছাড়াও মনস্তাত্ত্বিক চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, নিজেকে প্রমাণ করার মানসিক চাপ—সবমিলিয়ে অনেক সময় শরীর সাড়া দিলেও মন দেয় না। একে বলা হয় পারফরম্যান্স অ্যানজাইটি। এর ফলে অর্গাজম হয় ঠিকই, কিন্তু হয় অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুত এবং তৃপ্তিহীন।
বিকল্প কারণগুলিও নজরে রাখা জরুরি
ডাক্তারদের মতে, নিচের শারীরিক কারণগুলিও খতিয়ে দেখা উচিত—
ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ক্ষয় (ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি)
প্রোস্টেট অপারেশনের পরবর্তী জটিলতা
স্নায়বিক সমস্যা বা স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি
রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন, যেখানে বীর্য বাইরে না এসে মূত্রাশয়ে ফিরে যায়
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন
কি করা উচিত?
১. হরমোন পরীক্ষা করান: বিশেষত টেস্টোস্টেরন ও থাইরয়েডের মাত্রা।
২. ওষুধের তালিকা পর্যালোচনা করুন: প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে বিকল্প নিয়ে আলোচনা করুন।
৩. মানসিক চাপ কমান: নিজের ওপর পারফরম্যান্স চাপ না দিয়ে আনন্দে মন দিন।
৪. মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: যদি উদ্বেগ, অবসাদ বা সম্পর্কের জটিলতা থাকে।
৫. যোগ, মেডিটেশন ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
যৌনতা শুধু শরীরের খেলা নয়—এটি মন, স্নায়ু, হরমোন এবং আবেগের জটিল সমন্বয়। তাই সমস্যা হলে তাকে লজ্জা নয়, গুরুত্ব দিন। আধুনিক চিকিৎসা ও পরামর্শের মাধ্যমে এই সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব। যৌন আনন্দ হোক বয়সভিত্তিক নয়, বরং আত্মিক ও শারীরিক সুখের সমান দিশারী।
