আজকাল ওয়েবডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বুসেলটন জেটি শুধু একটি ঐতিহাসিক কাঠের ঘাট নয়, এটি দক্ষিণ গোলার্ধের দীর্ঘতম কাঠের জেটি হিসেবেও বিখ্যাত। স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকদের কাছে এটি একটি প্রিয় ভ্রমণস্থল, যেখানে অনেকে সমুদ্রের বাতাস উপভোগ করতে এবং মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে আসেন। কিন্তু গত সপ্তাহান্তে এই শান্ত উপকূলীয় এলাকায় ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা, যা উপস্থিত সকল দর্শকের মনে বিস্ময়ের ঝড় তোলে।
জলরাশির ঠিক পাশে দেখা গেল এক বিশাল ও বিরল অতিথিকে—একটি বামন নীল তিমি বা পিগমি ব্লু হোয়েল। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম এবিসি পার্থের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের চোখের সামনে তিমিটিকে সাঁতার কাটতে দেখে সেই মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন, যা পরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, নীলচে-ধূসর দেহের এই বিশাল তিমিটি ধীরে ধীরে জলের মধ্য দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। জেটির এত কাছে তিমিটিকে দেখতে পাওয়া এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা, যা সারা জীবনে খুব কম মানুষই উপভোগ করতে পারেন। ভিডিওর পেছনে শোনা যায়, উপস্থিত লোকজন বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলছেন—“ও মাই গড!”, “এটা কত বড়!”, “অবিশ্বাস্য!” এক মহিলার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে শোনা যায়, “ওহ! আজ আমার জীবনের সেরা দিন।”
আরও পড়ুন: সৌরজগতের বাইরে ৬,০০০ গ্রহ আবিষ্কার করেছে নাসা, কী রয়েছে এলিয়েন গ্রহগুলিতে
বিজ্ঞানীদের মতে, বামন নীল তিমি সাধারণত প্রায় ২৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, এবং ভিডিওতে দেখা প্রাণীটি সম্ভবত সম্পূর্ণ বয়স্ক ছিল। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের পর থেকে এই তিমিরা ইন্দোনেশিয়ার প্রজনন ক্ষেত্র থেকে দক্ষিণমুখী অভিবাসন শুরু করে এবং জিওগ্রাফ বে-র আশেপাশের জলে দিয়ে অতিক্রম করে।
ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অসংখ্য ব্যবহারকারী তাঁদের মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। কেউ লিখেছেন, “অসাধারণ! তোমরা কত ভাগ্যবান, এমন দৃশ্য দেখতে পেরেছ।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “প্রকৃতি তার চিরন্তন জাদু দেখাচ্ছে।” এক শিক্ষক লিখেছেন, “এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য! আমি আমার ছাত্রদের সঙ্গে এই তিমির আকার নিয়ে আলোচনা করি, কিন্তু এত বড় কখনো দেখিনি।” আরও অনেকে বলেছেন, “কী সুন্দর!”, “অতি মহিমান্বিত প্রাণী”, “অবিশ্বাস্য! আর মানুষের আনন্দও দারুণ।”
তবে কিছু দর্শক তিমিটির স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন মন্তব্য করেন, “আশা করি এটি অসুস্থ নয়, কারণ তীরের এত কাছে আসা নীল তিমির স্বাভাবিক আচরণ নয়, এটি হয়তো বিপদে পড়েছে।”
পিগমি ব্লু হোয়েল মূলত অস্ট্রেলিয়ান নীল তিমির একটি বিশেষ উপপ্রজাতি, যা প্রথম ১৯৬৬ সালে ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে শনাক্ত হয়। এরা আকারে আসল নীল তিমির তুলনায় কিছুটা ছোট—প্রায় ২৪ মিটার লম্বা, যেখানে “ট্রু” ব্লু হোয়েল প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। বিশাল দেহ সত্ত্বেও, এরা ক্ষুদ্র সামুদ্রিক ক্রাস্টেশিয়ান যেমন ক্রিল খেয়ে বেঁচে থাকে, যা তাদের শক্তি জোগায়।
বুসেলটন জেটির সেই দিনটি স্থানীয়দের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, কারণ প্রকৃতির এই মহিমাময় দৃশ্য কেবল একটি সামুদ্রিক প্রাণীর উপস্থিতি নয়—এটি মানুষের সঙ্গে সমুদ্রজীবনের এক অনন্য, শান্তিপূর্ণ সাক্ষাৎ, যা স্মরণ করিয়ে দেয় যে পৃথিবীর গভীরে এখনও বিস্ময় আর সৌন্দর্যের শেষ নেই।
