আজকাল ওয়েবডেস্ক: অবশেষে ধরা পড়ল প্রায় পাঁচ বছর ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ঘুরে বেড়ানো বিজেপি বিধায়কের ভাইপো! দুর্গাপুরের কাঁকসার নাবালিকা ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুইয়ের ভাইপো সহদেব ঘড়ুইকে মঙ্গলবার সকালে রাজবাঁধ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থেকেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দুর্গাপুর ও কাঁকসা জুড়ে।

জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২০ সালের ৫ই মে। কাঁকসা থানায় দায়ের হয়েছিল এক নাবালিকার ধর্ষণের অভিযোগ। অভিযোগের আঙুল ওঠে বামনাবেড়া এলাকার বাসিন্দা সহদেব ঘড়ুইয়ের দিকে। যিনি বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুইয়ের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।

অভিযোগ সামনে আসতেই তোলপাড় পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। তদন্তে নেমে পুলিশ বারবার তল্লাশি চালালেও কোনো খোঁজ মিলছিল না অভিযুক্তের। পাঁচ বছর ধরে জায়গা পাল্টে পাল্টে গা ঢাকা দিয়ে ছিল সহদেব।

আদালতের তরফে একাধিকবার হাজিরার নির্দেশ জারি হলেও সে ছিল অধরা। অবশেষে কাঁকসার রাজবাঁধ থেকে মঙ্গলবার সকালে গোপন সূত্রের ভিত্তিতে তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। পরে তাকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়।

এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলা সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বর-এর বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, 'ছেলেটি ত্রিপুরায় লুকিয়ে ছিল বলে শুনেছি। পুলিশ ধরেছে। আমি বিরোধী দলনেতাকে বলব দুর্গাপুরে এক ধর্ষণ কাণ্ডে মঞ্চ বেঁধে ভাষণ দিচ্ছিলেন। আজ আমরা মঞ্চ তৈরি করব. আসুন ভাষণ দিয়ে যান।'

অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই বলেন, 'পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আদালত বিচার করবে। এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না। প্রায় কুড়ি বছর ধরে আমরা আলাদা থাকি। গ্রামের বাড়িতে বছরে এক আধবার যাই। খোঁজ নিয়ে যেটা জেনেছি মেয়েটির সঙ্গে সহদেবের প্রেম ছিল। তার পরে কী হয়েছে জানা নেই। প্রেমের এই কথা গ্রামের সকলেই জানে। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আদালত বিচার করবে। এর থেকে বেশি আমি কিছু বলব না।'

এদিকে ধৃত সহদেব ঘড়ুইকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে দাবি করে. তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, দুর্গাপুরে মেডিক্যাল পড়ুয়া ধর্ষণ মামলায় বড় মোড় ঘটে সম্প্রতি। ধৃত পাঁচ অভিযুক্তকেই শনাক্ত করেন নির্যাতিতা।

আদালতের নির্দেশে কিছুদিন আগে জেলে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এই শনাক্তকরণ পর্ব হয়। যেখানে এই মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনকে নির্যাতিতা একে একে শনাক্ত করেন বলে একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে।  

এই বিষয়ে ওই সূত্রটি জানায়, শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে আরও ২০ জনের সঙ্গে দাঁড় করানো হয়। তাদের মধ্যে থেকেই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে আলাদা করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই শনাক্তকরণের পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর মামলায় আরও গতি বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। 

গত ২২ অক্টোবর দুর্গাপুর মহকুমা আদালত এই শনাক্তকরণের নির্দেশ দেয়। ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত ৬ জনের মধ্যে একজন নির্যাতিতার সহপাঠী। যেহেতু সে আগে থেকেই নির্যাতিতার পরিচিত সেজন্য তাকে বাদ দিয়েই বাকি পাঁচজনকে শনাক্তকরণের নির্দেশ দেয় আদালত। অভিযুক্তরা সকলেই আপাতত জেল হেফাজতে আছে।