আজকাল ওয়েবডেস্ক: আসিয়ান ও ইস্ট এশিয়া সম্মেলনের ফাঁকে শনিবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি দুই নেতার গত এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ এবং চলতি বছরে চতুর্থ মুখোমুখি আলোচনা।
জয়শঙ্কর এক্স (X)-এ লিখেছেন, “আজ সকালে কুয়ালালামপুরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী @SecRubio-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আনন্দিত। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।” তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রক কিংবা মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কোনও পক্ষই বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেনি।
বৈঠকের আগে রুবিও সাংবাদিকদের জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও “গভীর” করার ইচ্ছা রয়েছে ওয়াশিংটনের। তিনি বলেন, “ভারত উদ্বিগ্ন হতে পারে, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিস্তারের উদ্যোগ কোনওভাবেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতি করবে না।” তাঁর কথায়, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে কেবল সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার সীমা ছাড়িয়ে আরও বিস্তৃত সম্পর্ক গড়তে চায়।
এই মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই নয়াদিল্লিতে কৌতূহল ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। কারণ, গত কয়েক মাসে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা ভারত–মার্কিন সম্পর্কে নতুন সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করেছে।
রুবিও ও জয়শঙ্কর এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেসময় মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
কুয়ালালামপুরে এদিনের বৈঠকটি এমন এক সময়ে হল যখন বাণিজ্যিক মতপার্থক্য ও পাকিস্তান-সংক্রান্ত ইস্যুতে ভারত–আমেরিকা সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনে রয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসিয়ান ও ইস্ট এশিয়া সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিরোধীরা দাবি করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া এড়াতেই মোদি সম্মেলনে যাননি।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ইসলামাবাদের প্রতি নরম সুরে কথা বলছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছে। গত জুনে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। এটি ছিল প্রথমবার, যখন কোনও কার্যরত পাকিস্তানি সেনাপ্রধান মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।
সেই বৈঠকের অল্প কিছুদিন আগেই ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরিণতিতে ভারত–পাক সীমান্তে উত্তেজনা চরমে ওঠে। তখন ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে “যুদ্ধবিরতি” হয়েছে। পরে তিনি বলেন, “এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।”
ভারত অবশ্য ট্রাম্পের দাবি নস্যাৎ করেছে। নয়াদিল্লির বক্তব্য, সেটি কোনও আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি ছিল না, বরং পাকিস্তানের অনুরোধে সাময়িক সংঘর্ষবিরতি ঘটেছিল।
এদিকে সেপ্টেম্বরে মুনির ফের ওয়াশিংটনে যান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে। এটি ছিল ছয় বছর পর কোনও পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর হোয়াইট হাউস সফর। পরে মিশরে গাজা শান্তি সম্মেলনে ট্রাম্প শাহবাজকে বক্তৃতার আমন্ত্রণ জানান এবং ফের তাঁর “নোবেল প্রাইজ যোগ্যতা” নিয়ে মন্তব্য করেন।
ভারতের কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন পাকিস্তান–কেন্দ্রিক কৌশল ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে। যদিও জয়শঙ্কর ও রুবিওর বৈঠকের সরকারি বিবরণ প্রকাশ না হওয়ায়, কূটনৈতিক মহল এখন নজর রাখছে—এই আলোচনা ভবিষ্যতে ভারত–মার্কিন সম্পর্কের গতিপথে কতটা প্রভাব ফেলবে।
