ভারতে বর্তমানে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়াবেটিস হঠাৎ হয় না, এটি নীরবে আক্রমণ করে। রোগ নিশ্চিত হওয়ার আগে অনেক ক্ষেত্রে শরীর কিছু সূক্ষ্ম লক্ষণ প্রকাশ করে, যা সাধারণত চোখে পড়ে না। কিন্তু সেগুলি লক্ষ্য করেই শর্করার মাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে। যাতে স্বাস্থ্য সমস্যা আরও বাড়ার আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

শারীরিক সঙ্কেত হল শরীরের সাহায্যের আহ্বান। তবে এগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে বা কেবল ক্লান্তি বা মানসিক চাপ মনে করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই লক্ষণগুলো শনাক্ত করলে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া যায়, যা বড় অসুস্থতার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।

হঠাৎ ওজন পরিবর্তন
বিশেষ কোনও কারণ ছাড়াই ওজন হঠাৎ বাড়া বা কমা, উভয়ই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক সঙ্কেত হতে পারে। অতিরিক্ত ইনসুলিনের ফলে শরীরের চর্বি জমা হয়, বিশেষ করে পেটের অংশে। অন্য দিকে, কারও কারও মাংসপেশী কমে যায় কারণ শরীর সঠিকভাবে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না। এই দুই ক্ষেত্রে শরীরের আকৃতির পরিবর্তন হঠাৎ করে প্রথম মেটাবলিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।

ত্বকের পরিবর্তন
ঘাড়, বাহুমূল এবং লিঙ্গের আশেপাশে ত্বক গাঢ়, মোটা এবং ভেলভেটের মতো হয়ে যাওয়া। এটি কেবল চেহারার সমস্যা নয়। রক্তে ইনসুলিনের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ, যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। এই ধরনের ত্বকের পরিবর্তন দ্রুত চিকিৎসা পরীক্ষা করানোর জন্য সতর্কতা দেয়।

পা এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া
পায়ের বা গোড়ালির আশেপাশের এলাকা ফুলে যাওয়া প্রথমে চোখে পড়তে নাও পারে, তবে এটি সাধারণত সন্ধ্যার দিকে বা দীর্ঘ সময় বসার পরে আরও বেশি দেখা যায়। রক্তে শর্করার ওঠা-নামা কিডনির কার্যকারিতা প্রভাবিত করে, যার ফলে শরীরে তরল জমে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ শর্করা রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে, যা রক্তপ্রবাহ কমিয়ে ফেলে এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে।

ঘাড়ের চর্বি এবং পিঠের উপরের দিকে গাঁট
ঘাড়ে অতিরিক্ত চর্বি জমা বা সেই অংশটি মোটা হয়ে যাওয়া ইনসুলিন প্রতিরোধের চিহ্ন হতে পারে। একই ভাবে পিঠের উপরের দিকে ছোট উঁচু কুঁজের মতো অংশ দেখা দেয়,  যাকে অনেক সময় ‘বাফেলো হাম্প’ বলা হয়, হরমোনজনিত ও অতিরিক্ত কর্টিসলজনিত সমস্যা থেকে হতে পারে। 

ডায়াবেটিস একটি নীরব শত্রু। এর প্রাথমিক সঙ্কেতগুলি চিহ্নিত করা হলে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব এবং বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো যায়। হঠাৎ ওজন পরিবর্তন, ত্বকের রঙ বদল, পায়ের ফোলা বা ঘাড় ও পিঠে চর্বি জমা—এসব ছোট লক্ষণকে অবহেলা না করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। শরীরের সতর্কবার্তাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে জীবনধারায় পরিবর্তন আনা এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।