অনেকের মুখেই শোনা যায়, হাঁটু পুরোপুরি সোজা করতে গেলে ব্যথা হয় বা হাঁটু আটকে যায়। কখনও কখনও মনে হয় হাঁটু ‘লক’ হয়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে বলা হয় ‘লকড নি’। শুধু বয়স বাড়লেই নয়, বর্তমানে সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে কমবয়সিরাও এই সমস্যায় ভুক্তভোগী। যদিও অনেকে খুব একটা পাত্তা দেন না বটে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁটু ঠিকমতো সোজা না হওয়ার পেছনে কয়েকটি গুরুতর কারণ থাকতে পারে। যা প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে চিকিৎসা না করলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
১. মেনিস্কাস ছিঁড়ে যাওয়াঃ হাঁটুর মধ্যে থাকা কার্টিলেজ বা মেনিস্কাস হঠাৎ মোচড় খেলে ছিঁড়ে যেতে পারে। এতে কার্টিলেজের একটি অংশ হাড়ের মাঝে আটকে যায়, ফলে হাঁটু সোজা করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় ‘বাকেট হ্যান্ডেল টিয়ার’। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেনিস্কাস ছিঁড়ে গেলে প্রথমে আপনি হাঁটুতে ঝাঁকুনি অনুভব করতে পারেন এবং তারপর প্রচন্ড ব্যথা শুরু করে। বিশেষ করে হাঁটুতে চাপ দিলে ব্যথা হতে পারে, সঙ্গে হাঁটু ফুলে যায় এবং হাঁটার চেষ্টা করলে হাঁটু বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতিও অনুভব করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ শুধু পেট সাফই নয়, একাই বশে রাখে সুগার-কোলেস্টেরল! নিয়মিত এক চামচ পেটে গেলেই জব্দ হবে হৃদরোগ
২. হাঁটু সরে যাওয়াঃ যখন হাঁটুর হাড় উরুর হাড়ের অর্থাৎ ট্রোক্লিয়ার খাঁজ থেকে সরে যায়, তখন হাঁটুর স্থানচ্যুতি ঘটে। চিকিৎসকদের মতে, হাঁটুর স্থানচ্যুতি খুবই সাধারণ, বিশেষ করে ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যারা নিয়মিত ব্যায়াম এবং খেলাধুলা করেন তাদের এমনটা হতেই পারে। হাঁটু অতিরিক্ত বাঁকালে আঘাতের ফলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. হাঁটুর হাড় ভেঙে যাওয়াঃ যদি হাঁটুর হাড়ে ফাটল বা ভেঙে যায়, তবে হাঁটু সোজা করতে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। হাড় সঠিকভাবে না বসলে হাঁটুর চলাফেরাও সীমিত হয়ে যায়। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা না করালে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।

৪. আর্থ্রাইটিসঃ অনেক ধরনের আর্থ্রাইটিসের কারণে হাঁটু বাঁকাতে অসুবিধা হয়। জয়েন্টের মধ্যে তরুণাস্থি এবং অন্যান্য টিস্যু ভেঙে গেলে বা গঠন পরিবর্তন হলে সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়। এটি বয়সের বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে, তবে এর অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। যেমন অতিরিক্ত ওজন বা আগে কখনও হাঁটুতে আঘাত লাগা। যাদের অস্টিওআর্থ্রাইটিস আছে তাদের হাঁটুতে অস্টিওফাইট নামক একটি হাড়ের বৃদ্ধিও হতে পারে, যার ফলে হাঁটু বাঁকাতে সমস্যা হয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে ব্যথা এবং প্রদাহ হয় যা হাঁটুর নাড়ানোয় ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। বুড়ো আঙুলে প্রভাব ফেলে গাউট। এক্ষেত্রে হাঁটু সহ যে কোনও জয়েন্টে লক্ষণ দেখা দিতে পারে এবং এটি শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমা হওয়ার কারণে হয়। এছাড়াও এর পিছনে অপুষ্টিকরডায়েট ও দুর্বল মেটাবলিসমও থাকতে পারে।
৫. আর্থ্রোফাইব্রোসিসঃ জয়েন্টের চারপাশে ‘স্কার’ টিস্যু জমা হলে আর্থ্রোফাইব্রোসিস হতে পারে। যা থেকে ব্যথা এবং হাঁটুর গতির পরিসর সীমিত করে। প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম নিলে, বরফ দিলে এবং ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যায়াম করলেও স্বস্তি পাবেন।
