আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত এখন “প্রায় পুরোপুরি বন্ধ” করে দিয়েছে রাশিয়া থেকে তেল কেনা। তিনি জানিয়েছেন, নয়াদিল্লি রুশ তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে এবং মস্কোর সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক “ডি-এসক্যালেশন” বা প্রশমনের পথে নিয়ে গেছে।

শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প বলেন, “ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। তারা ইতিমধ্যেই কমিয়ে দিয়েছে এবং প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। তারা মোট প্রায় ৩৮ শতাংশ তেল কিনেছিল, কিন্তু এখন আর তা করবে না।” এই মন্তব্যের ফলে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে বাণিজ্য ও জ্বালানি নীতিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করেছে, এবং রুশ তেল কেনার সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে জ্বালানি আমদানির উৎসকে বৈচিত্র্যময়” করছে। এই বক্তব্যকে কূটনৈতিকভাবে ট্রাম্পের দাবির জবাব হিসেবেই দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাকি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন রুশ তেল আমদানি বন্ধ করা হবে। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, ভারত ছাড় মূল্যে রুশ তেল কিনে মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টায় পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। তবে নয়াদিল্লি বারবার জানিয়েছে, তাদের তেল কেনার সিদ্ধান্ত “জাতীয় স্বার্থ এবং বিশ্ব বাজারের গতিশীলতার উপর নির্ভরশীল।”

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি জমি এখন ব্রহ্মোসের রেঞ্জের মধ্যে, লখনউয়ে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যাচ উদ্বোধন করে হুঙ্কার রাজনাথের

ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেন, “দেশের জ্বালানি নীতি সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও ভোক্তাদের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের সমস্ত লেনদেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে হয় এবং কোনও  নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে না।” সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন স্পষ্ট হয়েছে। ভারত এই পদক্ষেপকে “অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ” বলে বর্ণনা করে সতর্ক করেছে যে এর ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

একই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন যে, তিনি নাকি এ বছরের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য এক যুদ্ধ ঠেকাতে ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, “পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমি কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছি। আপনি ভারত ও পাকিস্তানের দিকে তাকান — দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে তা ভয়ঙ্কর হতো।”

মে মাসে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা নিয়ে ট্রাম্পের এই মধ্যস্থতার দাবি আগেও বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ১০ মে রাতে আমেরিকার নেতৃত্বে দীর্ঘ বৈঠকের পর ভারত ও পাকিস্তান ‘সম্পূর্ণ ও তৎক্ষণাৎ’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবি দৃঢ়ভাবে খণ্ডন করা হয়েছে। নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সমঝোতা হয়েছিল দুই দেশের সামরিক অপারেশনস ডিরেক্টর জেনারেলদের (DGMO) সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে, তৃতীয় কোনও পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই।

এই সমঝোতার পটভূমিতে ছিল ভারতের “অপারেশন সিঁদুর”, যা ৭ মে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। ওই অভিযান ছিল ২২ এপ্রিল পাহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার প্রতিশোধ। চার দিনের পাল্টা হামলার পর ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান একসঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। ভারত জানিয়েছিল, এটি ছিল সরাসরি সামরিক পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত, কোনও বিদেশি মধ্যস্থতার ফল নয়।

ট্রাম্পের ধারাবাহিক দাবির মধ্যেও ভারত তার অবস্থান অপরিবর্তিত রেখেছে — পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত বিষয় দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের নীতি থেকে নয়াদিল্লি বিচ্যুত হবে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করতে পারে, বিশেষত যখন বাণিজ্য, শুল্ক ও জ্বালানি নিয়ে ইতিমধ্যেই টানাপোড়েন চরমে পৌঁছেছে।