আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভার প্রশ্নোত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্ট করে জানাল না, ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হলে কী কী বৈধ নথি লাগবে। গৃহ প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই কেবল লিখিত জবাবে বলেন, ভারতের নাগরিকত্ব নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ এবং তার অধীনে প্রণীত নিয়মাবলীর দ্বারা পরিচালিত হয়।
সংসদে প্রশ্ন
সিপিআই(এমএল)-এর সংসদ সদস্য সুধামা প্রসাদ লোকসভায় প্রশ্ন তুলেছিলেন—
১. নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য সরকার কোন কোন নথিকে বৈধ হিসাবে গণ্য করে?
২. গত ২৫ বছরে সারা দেশে কত জন্ম সনদ ইস্যু হয়েছে?
৩. জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকারগুলি থেকে কম কভারেজের রিপোর্ট এসেছে কি না এবং কোন ১০টি রাজ্যে এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি?
মন্ত্রকের জবাব
প্রতিমন্ত্রী রাই জবাবে জানান, নাগরিকত্ব পাওয়া যায়—
জন্মসূত্রে (Section 3),
বংশসূত্রে (Section 4),
নিবন্ধনের মাধ্যমে (Section 5),
স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে (Section 6),
কিংবা ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে (Section 7)।
তবে কোন নথি নাগরিকত্ব প্রমাণে গ্রহণযোগ্য—সে তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রকাশ করেনি।
জন্ম নিবন্ধনের পরিসংখ্যান
রাই সংসদে গত ২৫ বছরে রাজ্যভিত্তিক জন্ম নিবন্ধনের একটি পরিসংখ্যান টেবিল দিয়েছেন। যদিও মৃত্যুর তথ্য বা কম কভারেজ নিয়ে আলাদা বিশ্লেষণ দেননি।
বিহারে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া
এদিকে বিহারে SIR প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য যে ১১টি নথি গ্রহণযোগ্য বলে জানানো হয়েছে, তার মধ্যে জন্মসনদ রয়েছে। কিন্তু তালিকায় নেই—
আধার কার্ড,
ভোটার আইডি,
রেশন কার্ড।
ফলে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষকে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে কিসের ভিত্তিতে বাদ দেওয়া হয়েছে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।
সুপ্রিম কোর্টে বিতর্ক
সুপ্রিম কোর্টে এই SIR প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানিতে আদালত বলেছে, “নাগরিকত্ব নির্ধারণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নয়, বরং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।” কিন্তু পাল্টা নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, তারা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের ক্ষমতা রাখে। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে লাখো মানুষের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আসামের অভিজ্ঞতা
আসামে ‘দ্য ওয়ার’-এর প্রতিবেদন দেখিয়েছে, কীভাবে উচ্ছেদ হওয়া মুসলিম পরিবারগুলিকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভোটার আইডি আর বৈধ থাকবে না। ফলে কোন নথি তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণে যথেষ্ট হবে—সে প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত। নাগরিকত্ব প্রমাণে সরকার যখন স্পষ্টভাবে কোনো নথির তালিকা দিচ্ছে না, তখন বিহার ও আসামে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তবে ভোটাধিকার হারানোর মুখে পড়ছেন।
