ছোটদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে আমরা যতটা চিন্তিত হই, মানসিক সমস্যা নিয়ে ততটা ভাবি না। ওদেরও যে মনের অসুখ হতে পারে, তা যেন কোথাও মানতে পারেন না অনেকেই। কিন্তু শিশুদের মানসিক সমস্যার হার গোটা পৃথিবীতে ক্রমশ বাড়ছে। আজকের দ্রুতগতির জীবনযাত্রা, পড়াশোনার চাপ, প্রতিযোগিতা, সামাজিক প্রত্যাশা ও ডিজিটাল আসক্তি-সব মিলিয়ে শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও মানসিক অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। তাই অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। প্রথম থেকেই সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের গতিপ্রকৃতি বোঝা জরুরি। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে তাদের অনুভূতি বোঝা, সঠিক রুটিন তৈরি করা এবং ভালবাসা ও বোঝাপড়ার পরিবেশ দেওয়া সবচেয়ে জরুরি। যদি ছোটবেলা থেকেই কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তাহলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেকটাই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। আজ ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আসুন দেখে নেওয়া যাক বাবা-মায়েরা সন্তানের কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখবেন- 

১. অনুভূতি প্রকাশের অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুরা প্রায়ই তাদের ভয়, দুঃখ বা অস্বস্তি প্রকাশ করতে পারে না। এতে মনের ভিতর মানসিক চাপ জমতে থাকে। তাই অভিভাবকেরা প্রতিদিন শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান, তাদের সারাদিনের গল্প শুনুন। 'আজ স্কুলে কেমন কাটল?', 'তুমি কেমন অনুভব করছ?'-এই সাধারণ প্রশ্নই তাদের মনে খোলামেলা পরিবেশ তৈরি করবে। একইসঙ্গে শিশুদের মনে হবে যেন পরিবারের বড়রা সবসময় তাদের কথা শুনতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুনঃ শুধু মহিলা নয়, পুরুষেরও হতে পারে স্তন ক্যানসার! কোন লক্ষণ অবহেলা করলেই শরীরে ছড়িয়ে পড়বে মারণ রোগের বিষ

২. নিয়মিত ঘুমের রুটিন বজায় রাখুনঃ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ও মানসিক ভারসাম্যের জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়মিত ঘুম, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম বা রাত জাগা শিশুর মুড, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে। তাই ঘুমের নির্দিষ্ট সময় বজায় রাখা এবং শোওয়ার আগে গ্যাজেট থেকে দূরে রাখা খুব দরকার। ঘুমানোর আগে গল্প বা হালকা গান শুনলে মন শান্ত হবে।

৩. অন্যের সঙ্গে তুলনা নয়ঃ যে কোনও ধরনের তুলনা শিশুর আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়। তুলনা নয়, উৎসাহই শিশুর প্রেরণা বাড়ায়। আসলে প্রতিটি শিশুর শেখার গতি ও ক্ষমতা আলাদা। তাই অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করে তার নিজের অগ্রগতি ও প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করুন। 

৪. ধ্যান বা মাইন্ডফুলনেস শেখানঃ ধ্যান বা মনোসংযোগের অনুশীলন শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের নয়, শিশুদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি মনোযোগ বাড়ায়, উদ্বেগ কমায় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। প্রথমে ২–৩ মিনিটের শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন দিয়ে শুরু করা যায়। ধীরে ধীরে এটিকে খেলার মতো মজাদার করে তুললে শিশুরা আগ্রহ পাবে।

৫. সহানুভূতি ও কৃতজ্ঞতা শেখানঃ বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব শিশুরা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল ও কৃতজ্ঞ থাকতে শেখে, তারা মানসিকভাবে বেশি সুখী ও স্থিতিশীল হয়। হিংসা, রাগ বা প্রতিযোগিতার বদলে ভালবাসা ও সহযোগিতার মানসিকতা তৈরি করুন। শিশুকে “ধন্যবাদ” বলা, সাহায্য করা, বা কারও দুঃখে পাশে থাকা শেখান।

কেন এই অভ্যাসগুলো জরুরি? শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া মানে ভবিষ্যতের প্রজন্মকে মানসিকভাবে শক্ত ও ইতিবাচক করে তোলা। যদি আজ থেকেই পরিবারে এই অভ্যাসগুলো চর্চা করা হয়, তাহলে তারা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জকে শান্তভাবে সামলাতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে।” তাই বাবা-মা নিজেরাও মানসিকভাবে শান্ত ও সহনশীল থাকলে সেটির ইতিবাচক প্রভাব সন্তানদের উপর পড়ে।