থেমে গিয়েছে চেনা কণ্ঠ। অন্য সুরলোকে যাত্রা জুবিন গর্গের। খ্যাতনামা অসমীয়া গায়কেক আকস্মিক প্রয়াণে সঙ্গীত জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মাত্র ৫২ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিনি। আগামী দিনে অনুষ্ঠিত হতে চলা চতুর্থ নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করার কথা ছিল তাঁর, কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা।
জুবিনের মৃত্যুতে শোকের মেঘ গোটা আসামের আকাশে। অগুনতি অনুরাগীর চোখে অশ্রুধারা অবিরাম। তার মাঝেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে গায়কের পরিবারের হৃদয়বিদারক দৃশ্য। স্ত্রীর গরিমা সাইকিয়া গর্গ-সহ ঘনিষ্ঠজনদের চোখে অঝোর অশ্রু আর ভেঙে পড়া অবস্থা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে— কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এক প্রিয় শিল্পীর চলে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে এক গভীর শূন্যতা।
এক্স-এর একটি পেজেও ভাগ করে নেওয়া হয়েছে আবেগঘন দৃশ্য, যেখানে দেখা গেছে প্রয়াত জুবিন গার্গের পোষ্য কুকুরকে। মালিকের আকস্মিক প্রয়াণে যেন সে-ও বিষণ্ন, জলভরা চোখে দুঃখের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Garrima Saikia Garg (@garima.s.garg)
গরিমা সাইকিয়া গর্গ একজন খ্যাতনামা অহমিয়া কস্টিউম ডিজাইনার, চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব, যিনি অহমিয়া এবং আঞ্চলিক ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অবদানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি একাধিক চলচ্চিত্রের সহপ্রযোজক হিসাবেও কাজ করেছেন।
অসমে জন্ম নেওয়া গরিমা ছোটবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি.টেক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পাশাপাশি লেখালিখি, সম্পাদনা এবং ব্লগিংয়ের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং সিপিডব্লিউডি-তে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টার্নশিপও সম্পন্ন করেছেন।
গরিমা ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা ’(২০১৯), ‘শিকার ’(২০২৪) এবং ‘মিশন চায়না ’(২০১৭)-র মতো ছবিতে তাঁর কাজের ছাপ রেখেছেন।
২০০২ সালে গরিমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন গায়ক জুবিন। তাঁদের জুটি আজ অহমিয়া সংস্কৃতির প্রতীক হিসাবে গণ্য। জুবিনের ঐতিহ্যের সঙ্গে পথচলা ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি গরিমা তাঁর নিজস্ব সাফল্যের পথও তৈরি করেছেন।
জুবিনের জীবন থেমে যায় এক মর্মান্তিক স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায়। সিঙ্গাপুর পুলিশ তাঁকে জলে বাইরে নিয়ে আসে এবং দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
অহমিয়া সঙ্গীত ও চলচ্চিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর, ২০০৬-এ বলিউড ছবির ‘গ্যাংস্টার’-এর সেই জনপ্রিয় গান ‘ইয়া আলি’ তাঁকে সারা দেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে শুরু— গায়ক, সুরকার, অভিনেতা— বহুমুখী প্রতিভার আসল সংজ্ঞা হয়ে ওঠেন জুবিন।
অসমে তাঁর অবদান এককথায় অতুলনীয়। হৃদয়ছোঁয়া আধুনিক গান, ফিউশন ট্র্যাক, কিংবা প্রাণভরানো বিহু— সবেতেই তাঁর সুরে মিশেছে আবেগ। ৪০ হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করা হয়েছে তাঁর কণ্ঠে—অহমিয়া, হিন্দি, বাংলা থেকে ইংরেজি— সংখ্যায় এবং বৈচিত্র্যে তিনি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী।