আজকাল ওয়েবডেস্ক: সামনে সুপার কাপ। বড় লড়াই ইস্টবেঙ্গলের। সেই কথা মাথায় রেখে সন্দীপ নন্দী সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার ইমামি কর্তা আদিত্য আগরওয়াল সন্দীপ-অধ্যায় নিয়ে মুখ খুলেছেন। দেশের অন্যতম সেরা গোলকিপারকে তোপ দেগে বলেছেন, ''সন্দীপের যদি এতদিন সমস্যা থেকেই থাকবে, তবে ও আগে বলেনি কেন?''
সন্দীপের সরে যাওয়া দলের উপরে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন আদিত্য। তিনি বলেছেন, ''আমাদের ফুটবলাররা মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী, সন্দীপের এই বিতর্কিত ঘটনার প্রভাব দলের উপর পড়বে বলে মনে হয় না আমার।''
আরও পড়ুন: এডিলেড ম্যাচের আগে রোহিত–বিরাটকে নিয়ে বড় কথা বলে গেলেন কোচ, শুনলে ভিরমি খাবেন
আদিত্য আগরওয়ালের এহেন মন্তব্য শোনার পরে সন্দীপ নীরবতা ভাঙেন। কর জোরে ইমামিকর্তার কাছে তাঁর বিনীত নিবেদন, ''আদিত্যবাবু, এখন কাদা ছোড়াছুড়ি করার সময় নয়। দয়া করে, এখন এসব বন্ধ করুন। দলের পাশে থাকুন সবাই। সামনেই সুপার কাপ। ইস্টবেঙ্গল আমার প্রাণের ক্লাব। আমি এখনও কিন্তু ইস্তফা দিইনি। নিজেকে ইস্টবেঙ্গলেরই একজন বলে মনে করি। দলের কথা ভেবে আমি চুপ করে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার কথা শুনে বাধ্য হলাম মৌনব্রত ভাঙতে।''
নিস্তরঙ্গ ইস্টবেঙ্গলে হঠাৎই অগ্ন্যুৎপাত। অস্কার ব্রুজোঁর অসম্মান সইতে না পেরে গোয়া ছেড়ে কলকাতায় ফিরে এসেছেন বহুযুদ্ধের সৈনিক সন্দীপ। ইস্টবেঙ্গলের গৌরবময় ইতিহাসে যাঁর নাম থেকে যাবে চিরদিন। সেই সন্দীপ এখন আহত। তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত পড়েছে। ভিনদেশি কোচের কাছ থেকে চরম অসম্মান সহ্য করতে না পেরে সন্দীপ প্রাণের প্রিয় ইস্টবেঙ্গলকে গোয়ায় রেখে চলে এসেছেন। তিনি রক্তাক্ত, বুকে তাঁর পাষাণ চাপা। মনের দুঃখে সন্দীপ বলছেন, ''এই অসম্মান আমি সইতে পারছি না। সমাজমাধ্যমে নিরন্তর আমাকে কটাক্ষ করে চলেছেন সমর্থকরা। ওদের দোষ আমি দিচ্ছি না। কারণ ওরা আসল সত্যিটা জানে না। আমি প্রথম দিন থেকেই জানতাম আগুন নিয়ে খেলতে নেমেছি। আমাকে আতসকাচের নীচে ফেলা হয়েছিল। আমার উপরে মানসিক নির্যাতন চালানো হত। আমাকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। ইন্টারভিউয়ের প্রথমদিন কোচ অস্কার ব্রজোঁ আমাকে কী প্রশ্ন করেছিলেন, সেটা আমি সাংবাদিক বৈঠকে জানাব। আদিত্যবাবু, আপনি তো জানতেন সব। আপনার সামনেই তো ঘটেছিল। সেদিন কেন আপনি চুপ ছিলেন? কেন এতদিন আপনি মুখ খোলেননি? কেন আমার পাশে থাকেননি?'' সন্দীপ প্রশ্ন ছুড়ে দেন ইমামি-কর্তাকে।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জন্য ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছেন আশিয়ান-জয়ী গোলকিপার। তিনি নন্দিত। ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতা তাঁর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। আবার এবারের দলগঠন নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখতেন। সন্দীপ বলছেন, ''আমি চুপ করেই থাকতাম। আমার সঙ্গে কী ব্যবহার করা হয়েছে, তা কেউ জানে না। আমি বলিওনি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি নাকি ড্রেসিং রুমের কথা ফাঁস করে দিতাম। আমি সেসব কিছুই করিনি। আমার চরিত্র কাচের মতো স্বচ্ছ। এই কোচ আমার বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকে চক্রান্ত করে আসছেন। আমি টুঁ শব্দও করিনি। সেদিনও করতাম না। যদি না কোচ আমাকে সবার সামনে অসম্মান করতেন, অপমান করতেন। আমি দীর্ঘ সময় ধরে সম্মান, ভালবাসা অর্জন করেছি। সেই সম্মানে কেউ বিনা কারণে আঘাত করলে, আমাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করলে আমি ফোঁস করে উঠবই।'' এক নিঃশ্বাসে বলে যান সন্দীপ।
তাঁর সংযোজন, ''আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি। ইস্টবেঙ্গল দীর্ঘদিন সাফল্য পায়নি। এটা আমাকে ক্ষতবিক্ষত করত। আমি নিজের সময়ে সাফল্য পেয়েছিলাম ইস্টবেঙ্গলে। সেই আগুন নিয়ে, সাফল্যের খিদে নিয়ে ইস্টবেঙ্গলে কোচ হিসেবে এসেছিলাম। আমাদের দল দেখে আমি স্বপ্ন দেখতাম। ভাবতাম এবার কিছু একটা হবেই হবে। ডুরান্ড কাপে হারার পরে আমি দু'রাত ঘুমোতে পারিনি। সামনে সুপার কাপ। আদিত্যবাবু, আপনি অনেক টাকা খরচ করে দলগঠন করেছেন। আমিও ইমামিরই কর্মী। আপনি আমাকে বেতন দিয়েছেন। একটা কথা মনে রাখবেন, সন্দীপ নন্দী নুন খায় যাঁর, গুণ গায় তাঁর। এখন দয়া করে শান্তি বজায় রাখুন। বাকি কথা সুপার কাপের পরে হবে।''
গত দু'দিন ধরে ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ যে
দিকে মোড় নিয়েছে, তাতে প্রাক্তন ফুটবলাররা গর্জে উঠেছেন। মনে হচ্ছেন যেন দীর্ঘদিন বাদে ভিসুভিয়াস আবার জেগে উঠেছে। সন্দীপের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা। সন্দীপ নন্দী বলছেন, ''এ শুধু আমার একার লড়াই নয়। আমার উপরে কেবল যে আঘাত হানা হয়েছে তা নয়। আমার দেশের প্রাক্তন প্লেয়ার, বর্তমান কোচ সবাইকেই অসম্মান করা হয়েছে। আমি গর্জে উঠলাম সবার হয়ে। সন্দীপ নন্দী সব সইতে পারে, কেবল আত্মসম্মান বিকিয়ে দিতে পারে না। সন্দীপ নন্দীর শিরদাঁড়া চিরকাল সোজা। সেটা কারওর কাছে বন্ধক দিইনি। দেবও না। আদিত্যবাবু, ক্লাবের কথা ভেবেএখন আমরা চুপ থাকি। বাকি কথা আমি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলব। পারলে সেগুলো খণ্ডাবেন। থ্যাঙ্ক ইউ।''
সন্দীপ নন্দী এক ফুটবল-বিপ্লবী। তাঁর ফুটবলজীবনের বঞ্চনা, কোচিং জীবনে ভিনদেশি এক কোচের কাছে তীব্র অসম্মান তাঁর ভিতরের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। কেবলমাত্র ইস্টবেঙ্গলের স্বার্থে তিনি নিজেকে সংযত রাখছেন। বৃহত্তর এক লড়াইয়ে নামছেন তিনি। বিপজ্জনক আগুয়ান স্ট্রাইকারের পা থেকে বল কেড়ে নিতে ভয় পাননি কোনওদিন। সম্মান ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইতেও তিনি ভীতসন্ত্রস্ত নন। মাভৈঃ বলে নেমে পড়বেন সেই যুদ্ধেও। লড়াইয়ের আরেক নাম সন্দীপ নন্দী।
আরও পড়ুন: আরও আগে অভিষেক হলে শচীনকে টপকে যেতাম, আজব দাবি প্রাক্তন অজি তারকার...
