আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ'—এই ভাইরাল গানের একটি লাইন এখন শুধুমাত্র বিনোদনের বিষয় নয়, হয়ে উঠেছে জীবিকার হাতিয়ারও। এক অভিনব ভাবনায় বাঁকুড়ার বিকনার ডোকরা শিল্পগ্রামের পাশে এক ব্যতিক্রমী চায়ের দোকান তৈরি করেছেন সেখানকারই এক যুবক, বলরাম কর্মকার। তাঁর দোকানের নাম শুনলেই চোখ কপালে উঠবে অনেকের—'ছিঃ ছিঃ ছিঃ রে ননী ছিঃ, তোমার দুঃখে চায়ের দোকান খুলেছি!' 

ডোকরা শিল্পের জন্য বিশ্ববিখ্যাত বিকনার গ্রামে জন্ম নেওয়া বলরাম পেশায় ছিলেন একজন দক্ষ ডোকরা শিল্পী। তবে শিল্পের পাশাপাশি তাঁর মন খুঁজছিল নতুন কিছু। ভাইরাল গানের ব্যর্থ প্রেম, রস ও তীব্র ব্যঙ্গাত্মক আবেগ তাঁকে নাড়া দেয়। বলরাম ভাবলেন, এই আবেগকেই যদি ব্যবসার মঞ্চে নিয়ে আসা যায়? সেখান থেকেই শুরু এই অভিনব চায়ের দোকান। দোকানটি শুধু নামেই নয়, তার পরিবেশ ও ভাবনাতেও অনন্য। বাইরে বড় হোর্ডিংয়ে লেখা গানের সেই লাইন, আশপাশে রঙিন সাজসজ্জা, আর দোকানের এক কোণে লেখা আরও একটি ট্যাগলাইন—'আমরা কি চা খাব না?' যা করনা কালের সামাজিক প্রেক্ষাপটে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য! ছিল ৮৫ হাজার, এ বার লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে পুজোর সরকারি সাহায্য কত? ঘোষণা মমতার

সবমিলিয়ে বলরামের দোকান এখন কেবল চা বিক্রির জায়গা নয়, একধরনের সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র। দোকানে চা পাওয়া যায় মাটির ভাঁড়েও। দাম সাধ্যের মধ্যেই—পাঁচ ও দশ টাকা। তবে স্বাদে কোনও আপস নেই। ডোকরা শিল্পগ্রামের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিদিন বহু পর্যটক, স্থানীয় মানুষ ও শিল্পীরা এখানে আসেন এক কাপ চা ও একটু আলাপের আশায়। শিল্পী আর পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই পছন্দ করেন মাটির ভাঁড়ে চা। এই কারণেই এই চা দোকান হয়ে উঠেছে একাধারে এলাকার চা ও সংস্কৃতির নতুন মিলনস্থল। 

বলরাম বলেন, 'ভাইরাল গানগুলো খুব দ্রুত মানুষের আবেগে পৌঁছে যায়। সেগুলোর পেছনে একটা সত্যি থাকে, যেটা মানুষ অনুভব করে। আমি সেটাকেই কাজে লাগিয়ে ভেবেছিলাম এমন একটা দোকান তৈরি করি, যেখানে শুধু চা নয়, একটা গল্পও থাকবে।' তাঁর কথায় স্পষ্ট, এই ব্যবসা কেবল অর্থের জন্য নয়, ভালোবাসা ও শিল্পভাবনারও বহিঃপ্রকাশ। বলরামের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, শুধুমাত্র মূলধনের জোরে নয়, ব্যবসা দাঁড় করাতে লাগে নতুন ভাবনা, সাহস, আর সৃজনশীলতা। এখন তাঁর দোকান হয়ে উঠেছে এক স্থানীয় ‘ল্যান্ডমার্ক’, যেখানে মানুষ শুধু চা খেতে আসেন না, আসেন গল্প শুনতে, হাসতে আর ব্যর্থ প্রেমের ব্যঙ্গকে আনন্দে রূপ দিতে।

এই ঘটনা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা যোগাবে অনেক তরুণ-তরুণীকে। যারা জীবনের ছোট ছোট ব্যর্থতা থেকে পালিয়ে না গিয়ে, সেগুলোকেই শক্তি করে তুলতে চান। বলরামের চায়ের দোকান যেন জীবনেরই এক খোলা পাঠশালা—যেখানে শেখানো হয়, হার মানলেই শেষ নয়, ভাবনা বদলালেই শুরু। বলরামের মতে, ব্যবসায় শুধু পুঁজি নয়, চাই সৃজনশীলতাও। সেই সৃজনশীলতাই আজ তাঁকে এনে দিয়েছে স্বীকৃতি। ডোকরার মাটি আর ভাইরাল গানের সুরে তৈরি এই চায়ের দোকান আজ বাঁকুড়ার সংস্কৃতি ও উদ্ভাবনী সাহসের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।