আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টি ৩০০ মিলিমিটার। হাওয়া অফিসের পুর্বাভাস, রবিবারের প্রায় গোটা দিন জুড়েই উত্তরের জেলাগুলিতে তাণ্ডব চলবে ঝড়-বৃষ্টির। কয়েকঘণ্টার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিতে প্রকৃতির রুদ্রমূর্তি দেখেছে পাহাড়। ফুঁসছে তোর্সা, মানসাই। মহানন্দার বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে গ্রামে। বৃষ্টি-জলের তোড়ে সেতু ভেঙেছ। দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিকের একাধিক জায়গায় ধস। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মিরিক। সেখানে সেতু বিপর্যয়ে ন'জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গজুড়ে মৃত্যুমিছিল। একাধিক স্থানে মৃত আরও বহু। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবারেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যাচ্ছেন উত্তরবঙ্গে। একথা কিছুক্ষণ আগেই জানিয়েছেন তিনি।

উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রবিবার দুপুরে একটি পোস্ট দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি রবিবার দুপুরে। তাতে তিনি লিখেছেন- 

'উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাপ্লাবিত হওয়ায় আমি গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। কাল রাত্রে উত্তরবঙ্গে কয়েক ঘন্টার বিপুল বৃষ্টি হওয়ায় এবং বাইরে থেকে নদীর জল আমাদের রাজ্যে বিপুল পরিমাণ এসে পড়ায়  বিশেষত উত্তরবঙ্গে উদ্বেগজনক বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।  

গতকাল রাত্রে উত্তরবঙ্গে ১২ ঘন্টায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি হঠাৎ বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সংকোশ নদী এবং সাধারণভাবে সিকিম ও ভুটান থেকে বিভিন্ন নদীর বিপুল পরিমাণ জল এ রাজ্যে চলে আসায় বন্যা পরিস্থিতির  অবনতি হয়।
 
অকস্মাৎ  এই বিপুল বৃষ্টিতে এবং নদীর বন্যায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের কয়েকজন ভাই-বোন আমরা হারিয়েছি বলে খবর এসেছে।  এই দু:সংবাদে আমি বিপুলভাবে মর্মাহত। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গকে আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। প্রত্যেক পরিবারের  কাছে আমাদের সহায়তা অবিলম্বে পৌঁছে যাবে।

জলের ভয়ংকর তোড়ে দুটি লোহার সেতু ভেঙ্গে গেছে,  প্রচুর রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দার্জিলিং, কালিম্পং,  জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিশেষত মিরিক, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, মাটিগাড়া এবং আলিপুরদুয়ার  থেকে  আমাদের কাছে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে।

আমি গতকাল রাত থেকেই পরিস্থিতির উপরে টানা নজর রেখেছি। ইতিমধ্যেই মুখ্য সচিব, পুলিশের ডিজি, উত্তরবঙ্গের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেই মিটিংয়ে ছিলেন গৌতম দেব ও অনীক থাপা।

আমি সর্বক্ষণ সকলের সঙ্গে যোগাযোগে আছি এবং এই সূত্রে আগামীকাল নিজেই মুখ্যসচিব-কে নিয়ে উত্তরবঙ্গ যাচ্ছি। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। আমাদের পুলিশ আপনাদের উদ্ধার করে নেবে। এই উদ্ধার সংক্রান্ত খরচ আমাদের এবং পর্যটকদের এই বাবদ উদ্বিগ্ন না হবার জন্য অনুরোধ করছি। 
প্রাকৃতিক অবস্থানের জন্য মিরিকের মতো কিছু কিছু জায়গা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও আরো অনেক এলাকা আমাদের  নজরে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সব খবর রাখছি, প্রয়োজনমতো নির্দেশ দিচ্ছি এবং পরিস্থিতি  মোকাবিলার ব্যবস্থা করছি। আমাদের অফিসার ও পুলিশ সর্বত্র ও সকল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে সকল সহায়তা নিয়ে  পৌঁছে যাবে। 
রাজ্য সদর দপ্তর এবং জেলাগুলি ২৪ ঘন্টা কন্ট্রোল রুম খুলে রাখছে। যে কোন প্রয়োজনে আমাদের নবান্নে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন। 
যোগাযোগের ফোন নম্বর ০০৯১- ২২১৪-৩৫২৬/
০০৯১- ২২৫৩-৫১৮৫ 
টোল ফ্রি নম্বর
৯১-৮৬৯৭৯-৮১০৭০।'

?ref_src=twsrc%5Etfw">October 5, 2025

বিপর্যয়ের সময়ে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে দলের কর্মীদের একজোট হয়ে মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল।  এই কঠিন পরিস্থিতিতে সহযোগিতার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিষেক লিখেছেন-

'আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে জানতে পেরেছি, দার্জিলিং, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়ির কিছু অংশে অবিরাম বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞে প্রাণহানি ঘটেছে। মিরিক, জোড়বাংলো, সুখিয়াপোখরি এবং ফালাকাটা এই দুর্যোগকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
শোকাহত পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, দার্জিলিং জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ত্রাণ ও উদ্ধার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত সকলের কাছে বার্তা, আপনারা জানবেন, আপনি এই কঠিন সময়ে একা নন। আমি প্রতিটি  @AITCofficial স্বেচ্ছাসেবককে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছানোর, তাঁদের পাশে থাকার এবং সহায়তা করার জন্য আবেদন করছি। মিলিত সংকল্প এবং মা দুর্গার আশীর্বাদে, আমরা একসঙ্গে এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠব।'