আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভূত চতুর্দশীতে ভূতেদের ভোগ দেওয়া হয় আসানসোলে। একদিনের জন্য সাময়িকভআবে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। কালী পুজোর রাতে ফের মন্ত্রবলে বেঁধে ফেলা হয় তাদের। এমনই বিশ্বাস মহিশীলা কলোনীর বাসিন্দাদের। ফলে বিশ্বজুড়ে শুধু হ্যালোউইন ডে'ই পালিত হয় না ভূত চতুর্দশীর রাতও পালন হয় আসানসোলে। এই পরম্পরায় পুজো হয়ে আসছে বিগত প্রায় ৭৩ বছর ধরে।

আসানসোলের মহিশীলা ১ নম্বর কলোনীতে পিয়ালবেড়া শ্মশানের বটগাছে নাকি ভূতদের বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন বামাক্ষ্যাপার অন্যতম প্রধান শিষ্য বনমালী ভট্টাচার্য। প্রায় সত্তর বছর আগেকার এই ঘটনা। বনমালীবাবু আজ আর জীবিত নেই। কিন্তু গাছে নাকি রয়ে গেছে ভূতেদের দল। ভূত চতুর্দশীর রাতে তাদের কিছু সময়ের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। বলা চলে বাঁধন ছাড়া করা হয়। আর কালী পুজোর রাতে ফের বন্দি করা হয় অপদেবতাদের।

আরও পড়ুন: পূর্ব বর্ধমানে আগাম দীপাবলি, মহিলাদের নিয়ে আয়োজিত হল মিনি-ম্যারাথন ‘রান ফর লাইট’

বহুবছর আগে আসানসোলের রায় পরিবারের জমিদার জমি দান করেছিলেন তান্ত্রিক বনমালী ভট্টাচার্যকে। নদিয়ার নিবাসী বনমালী ভট্টাচার্য বামাক্ষ্যাপার শিষ্যত্ব নিয়েছিলেন মাত্র ৭ বছর বয়সে। সেই তান্ত্রিক বনমালী ভট্টাচার্যকে আশ্রম করে সাধনা করার জন্য মহিশীলার পিয়ালবেড়া শ্মশানে জমি দান করেছিলেন আসানসোল গ্রামের রায় পরিবার। তখন পিয়ালবেড়া শ্মশান ছিল জঙ্গলে ভরা নির্জন এক স্থান। ভূতদের খুব উপদ্রব ছিল তখন। রাতে কারোর মৃত্যু হলে ভয়ে শ্মশানে নিয়ে যেতে পারতেন না বাসিন্দারা। অপেক্ষা করতে হত সকালের জন্য। সেই নির্জন স্থানে সাধনা শুরু করেন বনমালীবাবু। শুধু তাই নয়, এলাকায় যাতে অনিষ্ট করতে না পারে তাই সমস্ত ভূতেদের একটি গাছে তিনি বেঁধে রেখে দিয়েছিলেন। 

সময় বদলেছে। পিয়ালবেড়া থাকলেও, আর শ্মশান নেই। সেই আশ্রমের মন্দির রয়ে গিয়েছে। আজও আছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। বনমালিবাবুল মারা গিয়েছেন বহু বছর হল। বর্তমানে তাঁর ছেলে বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য এই পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি বলেন কার্তিক অমাবস্যার আগের দিন ভূত চতুর্দশীতে সেখানে কালীপুজো করা হয়। মায়ের বীজমন্ত্রের পুজো হয়। শিবাভোগ ও ভৈরব ভোগ দেওয়া হয় পুজোর পরে।তিনবারে এই ভোগ দেওয়া হয়।সেই ভোগ থাকে ভাত,  মাংস ও কারণ। কালী পুজোর পরে সেই ভূতেদের মন্ত্র বলে বেঁধে দেওয়া হয় গাছের সঙ্গে। ভূত চতুর্দশীতে এটাই নাকি পরম্পরা এখানকার।